ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 12th April 2025 11:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ওয়াকফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের (Waqf Bill) দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের (Mursidabad) জঙ্গিপুর এলাকা। শুক্রবার দুপুরে অশান্তি চরমে পৌঁছয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি চলে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো, সাধারণ যানবাহন ও বাইক ভাঙচুর— একাধিক ঘটনায় অশান্তি ছড়িয়েছে শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান সংলগ্ন এলাকায়।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফও। বিএসএফের দাবি, রাজ্যের আবেদনেই তারা অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়েছে। অন্যদিকে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে। মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।
সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল জানান, হিংসার সম্ভাবনার খবর জানার পরই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন। মুখ্যসচিবের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে।
ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যপাল বলেন, "কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের। তবে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। সরকার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
#WATCH | Bengaluru: West Bengal Governor CV Ananda Bose says, "I have been receiving disturbing reports about some people taking law and order in their hands in some parts of Bengal. Protest is welcome under democracy, but not violence. Public order cannot be disturbed and the… pic.twitter.com/MlSYsKhwHb
— ANI (@ANI) April 11, 2025
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়াকফ ইস্যুতে শুক্রবার জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হন। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়।
এই ঘটনার মাঝেই ধুলিয়ানে স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের অফিসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর করা হয় অফিসের মধ্যে। একপ্রকার প্রাণে বাঁচতে হয় সাংসদকে। তিনি জানান, “আমি তখন শাজুরমোড় পার হচ্ছিলাম। বিক্ষোভকারীরা আমাকে ঘিরে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। কোনও সংগঠনের পতাকা বা নেতা সেখানে ছিল না। পরে পুলিশ আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।”
ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অঞ্চলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।”
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্র্যাক অবরোধের জেরে অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়েছে। এর আগে, ৮ এপ্রিল একই ইস্যুতে জঙ্গিপুরের উমরপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল। তবে শনিবার সকালে মোটের ওপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ ও বিএসএফ এলাকা টহল দিচ্ছে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য জুড়ে যেভাবে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, তা বন্ধ করতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়।” তিনি মুর্শিদাবাদ, দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলি, মালদা ও বীরভূম জেলার একাধিক থানার আওতাভুক্ত এলাকায় সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের দাবি জানান।