শেষ আপডেট: 12th April 2025 11:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গণতন্ত্রে প্রতিবাদ হতেই পারে, তাই বলে সেটা হিংসায় পরিণত হবে তা কোনওভাবেই কাম্য নয়। শুক্রবার এমনই বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Anand Bose)। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, 'আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, আর নিলেও সেটা একদমই বরদাস্ত করা হবে না'। জানিয়েছেন, এহেন অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর একান্তে আলোচনাও হয়েছে।
ওয়াকফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের (Waqf Bill) দাবিতে শুক্রের দুপুর থেকেই দফায় দফায় মুর্শিদাবাদের (Mursidabad) জঙ্গিপুর এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ধিকিধিকি অশান্তি পরে চরমে পৌঁছয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি, গাড়িতে আগুন লাগানো, সাধারণ যানবাহন ও বাইক ভাঙচুর— একাধিক ঘটনায় অশান্তি ছড়িয়েছে শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান সংলগ্ন এলাকাতেও। আর এর পরপরই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন রাজ্যপাল।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফও। বিএসএফের দাবি, রাজ্যের আবেদনেই তারা অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়েছে। অন্যদিকে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে। যদিও সুযোগ বুঝে স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার পরিস্থিতির নেপথ্যে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা।
এই আবহেই শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যপাল স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রয়েছে। এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে। কিন্তু একান্তে তাঁদের কী কথা হয়েছে তা গোপনই রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গেও তাঁর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান। ঘটনায় রাজ্য যে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটাও রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
রাজ্যপাল বলেন, "কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের। তবে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। সরকার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়াকফ ইস্যুতে শুক্রবার জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হন। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়।
এই ঘটনার মাঝেই ধুলিয়ানে স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের অফিসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর করা হয় অফিসের মধ্যে। একপ্রকার প্রাণে বাঁচতে হয় সাংসদকে। ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।
ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য জুড়ে যেভাবে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, তা বন্ধ করতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়।”
মুর্শিদাবাদ, দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলি, মালদা ও বীরভূম জেলার একাধিক থানার আওতাভুক্ত এলাকায় ৩৫৫ ধারা প্রয়োগেরও দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।