শেষ আপডেট: 21st May 2023 11:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: (G20 Kashmir) এককালে ভারতে কোনও আন্তর্জাতিক সম্মেলন মানেই তা অবধারিত ভাবেই হত দিল্লিতে। ১৯৮৩ সালের জোটনিরপেক্ষ দেশের সম্মেলনের আসর বসেছিল নয়াদিল্লিতে। বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশ অংশ নিয়েছিল এতে, এসেছিলেন তামাম দুনিয়ার তাবড় সব নেতা। অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। শুধু সাংবাদিকই এসছিলেন দেড় হাজার। অথচ তখন দিল্লিতে আজকের বিশাল পরিকাঠামোর প্রায় কিছুই ছিল না। সবটাই হয়েছিল বিজ্ঞান ভবনে। মহাসচিব হয়েছিলেন নটবর সিংহ। অথচ সাফল্যের নিরিখে এই সম্মেলনকে আজও জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের মধ্যে অন্যতম সফল বলে ধরা হয়।
সময় পেরিয়ে গিয়েছে চার দশক। নয়াদিল্লি এখন কার্যত এক 'গ্লোবাল সিটি'। কিন্তু ভারতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলন এবার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারা দেশে। আয়োজক শহরের মধ্যে রয়েছে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কলকাতা, মুম্বই, হায়দরাবাদের মত বড় শহরের পাশাপাশি হাম্পি, শিলিগুড়ি, হৃষীকেশ, মহাবলীপুরমের মত একাধিক ছোট শহর। রয়েছে ভূস্বর্গের শহর শ্রীনগরও (Srinagar)।
আর এই শ্রীনগরকে নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দু'টি স্বতন্ত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা চলছে। কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং দেশের আর পাঁচটি রাজ্যের মতই কাশ্মীরের উন্নয়ন সরকারের কর্তব্য— এই বার্তা আরও জোরালোভাবে দিতে এবার শ্রীনগরে জি২০ গোষ্ঠীর মত শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে সাউথ ব্লক।
কিন্তু এতেই বেসুরো হয়েছে চিন। গতকাল চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও রকম 'বিতর্কিত এলাকায়' জি২০ সম্মেলন আয়োজনের বিরোধিতা করছে তারা। চিনের প্রতিনিধি তাতে অংশ নেবেন না।
নয়াদিল্লির তরফে অবশ্য এর কড়া জবাব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাউথ ব্লক জানিয়েছে, ভারত সার্বভৌম রাষ্ট্র, সে তার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যেখানে খুশি এই সম্মেলন আয়োজন করতে পারে। সেটা তার সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যেই অন্য প্রায় সকল দেশই এতে অংশগ্রহণে সম্মতি দিয়েছে। ফলে শ্রীনগরকে কার্যত ঢেলে সাজা হচ্ছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠছে, এই সাজো সাজো রবের পাশাপাশি নিরাপত্তার নামে কার্যত পুলিশি অতিসক্রিয়তা চলছে।
জি২০ সম্মেলনকে সফল করতে আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখছে না প্রশাসন। প্রায় ১০০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে শ্রীনগরকে সুসজ্জিত করতে। অতিথিদের স্থানীয় 'সাইট সিয়িং' করানো, ডাল লেকে শিকারা-ভ্রমণ... ইত্যাদি সবই রয়েছে পরিকল্পনায়। মূল অনুষ্ঠান হবে শের-ই-কাশ্মীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে। অতিথিদের জন্য শ্রীনগরের একাধিক পাঁচতারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বেশিরভাগ থাকবেন তাজ বিভান্তা ও ললিত গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে।
এই পুরো ব্যবস্থাকে আঁটোসাটো নিরাপত্তায় ঘিরে রাখতে কেন্দ্রের তরফে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় প্রায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শ্রীনগর। সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাশাপাশি সিআরপিএফ, বিএসএফ, এসএসবি এবং ভারতের দুই সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড বা এনএসজি ও মার্কোস কমান্ডোবাহিনীকেও নামানো হয়েছে। গোটা ডাল লেক ঘিরে রেখেছেন মার্কোস জওয়ানরা। এক হাজার নতুন সিসিটিভি বসানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহানির্দেশক (ডিজি) দিলবাগ সিংহ জানিয়েছেন, দফায় দফায় আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় রয়েছে পুলিশ, রাতেও চলছে টহল।
অভিযোগ, এই টহলদারিতেই কার্যত পান থেকে চুন খসলেই ধরপাকড় চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। মেহবুবা মুফতি-সহ একাধিক নেতা-নেত্রীরা অভিযোগ করেছেন, বিনা কারণে বহু কাশ্মীরি যুবককে অন্যায়ভাবে আটক করেছে পুলিশ। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চলছে তল্লাশি, কথায় কথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থানায়। পাশাপাশি, জি২০ উপলক্ষে অন্তত তিন দিন সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে। কাশ্মীরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর, গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে সতর্কবার্তা এসেছে, ভারতের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে জি২০ চলাকালীন হামলা হতে পারে কাশ্মীরে। যদিও সরকারিভাবে এই নিয়ে কিছু জানায়নি প্রশাসন। তবে শেষ মুহূর্তে বিদেশী অতিথিদের বেশ কিছু সফরসূচি কাটছাঁট করা হয়েছে। গুলমার্গ দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, বাতিল করা হয়েছে সেটিও।
কাশ্মীর নিয়ে বাঙালির অতিপ্রিয় ফেলুদার গল্প ছিল, 'ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর'। এবার জি২০ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে ভূস্বর্গ সত্যিই স্বর্গীয় ও সুন্দর হয়ে ওঠে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে দেশবাসী।
পরমাণু বিস্ফোরণের শহরে অবশেষে প্রথমবার মুখোমুখি হলেন মোদী ও জেলেনস্কি