শেষ আপডেট: 30th September 2022 06:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অশোক গেহলট স্বেচ্ছায় লড়াই থেকে সরে গিয়েছেন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি (congress president) পদে গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থী। গেহলট সরে যাওয়ায় গান্ধী পরিবারের পছন্দের তালিকায় এখন এক নম্বরে আছেন দলের রাজ্যসভার নেতা তথা কর্নাটকের নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে। তিনিই আপাতত সনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi), রাহুল গান্ধীদের ডার্ক হর্স বলে দলের একাংশ মনে করছে।
কিন্তু কে হবেন পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি? ভোট হলে কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি? এই প্রশ্নের জবাব জানে না কংগ্রেসও। কংগ্রেস সূত্রের খবর, গেহলট সরে যেতেই কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ (rebel) গোষ্ঠী জি-২৩-এর (G-23) নেতারা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রবীণ নেতা আনন্দ শর্মার বাড়িতে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হয় নেতাদের। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সেই বৈঠকের আগে দিল্লির রাজস্থান হাউসে গিয়ে গেহলটের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন আনন্দ শর্মা।
ফলে দলীয় সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের অভ্যন্তরের নাটক নজির ছাপিয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি করার ক্ষেত্রেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সনিয়া, রাহুলদের। এমনকী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে গান্ধী পরিবারের অপছন্দের ব্যক্তির জিতে যাওয়াও অসম্ভব নয়। সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ভোটাভুটি এড়িয়ে সহমতের ভিত্তিতে কাউকে বেছে নেওয়ার পথে এগনোর কথাও ভাবা হতে পারে।
আজ শুক্রবার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র পেশ করার শেষ দিন। বৃহস্পতিবার বিকালে সনিয়া-গেহলট বৈঠকের পর দৃশ্যপট পুরোপরি বদলে গিয়েছে। লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন মধ্যপ্রদেশের দু’বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। আজ মনোনয়ন পেশ করতে পারেন মল্লিকার্জুন খাড়গে।
তবে আলোচনায় আছে আরও নাম। তারমধ্যে চর্চায় এগিয়ে মুকুল ওয়াসনিক। অনেক আগেই মনোনয়নের কাগজপত্র তুলে লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন শশী তারুর। প্রথম থেকেই আলোচনায় ছিল মণীশ তিওয়ারির নাম। গতকাল রাত পর্যন্ত তিনি স্পষ্ট করেননি আজ কী করবেন। বস্তুত নিজের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে স্পষ্ট আভাস দেননি।
বৃহস্পতিবার বেশি রাতে কংগ্রেস মহলে কুমারি শৈলজা এবং মীরা কুমারের নাম নিয়েও কথা হয়। শৈলজা দীর্ঘদিন কেন্দ্র ও রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। দক্ষ সংগঠক হিসাবেও নাম-ডাক আছে। অন্যদিকে, মীরা কুমার ছিলেন লোকসভার স্পিকার। ফরেন সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি জগজীবন রামের মেয়ে। যদিও সংগঠন পরিচালনা এবং এবং জনসংযোগে দক্ষতা বলতে গেলে শূন্য।
কংগ্রেসের অন্দরে এখন গতরাতে আনন্দ শর্মার বাড়িতে জি-২৩ নেতাদের বৈঠকের খবরটিই ভাইরাল। গুলাম নবি আজাদ দল ছেড়ে যাওয়ার পর আনন্দ শর্মাই সবচেয়ে প্রবীণ। তাঁর বাড়ির বৈঠকে হাজির ছিলেন মণীশ তিওয়ারি, বিএস হুড্ডা, পৃত্থীরাজ চৌহান প্রমুখ। তিন নেতাই বৈঠকের পর বলেছেন, যা চলছে যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে মঙ্গলদায়ক। যত বেশি প্রার্থী হয় তত ভাল।
কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, একাধির প্রার্থী থাকলে ভোট কাটাকাটির কারণে কারও জয় সম্পর্কেই নিশ্চিত হওয়া কঠিন। গেহলট প্রার্থী হলে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কেরলের সাংসদ শশী তারুরের লড়াই হত। তাতে গেহলটের বিপুল ভোটে জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। তিনি সরে যাওয়ার পর একাধিক নেতা দলীয় সভাপতি পদে প্রার্থী হতে মুখিয়ে আছেন। ভোট হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দিকেই গড়াচ্ছে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন।
সাম্প্রতিক অতীতে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন ঘিরে এমন পরিস্থিতির নজির নেই। ওই পদে শেষবার নির্বাচন হয়েছিল ২০০০ সালে। সেবার সনিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের নেতা জীতেন্দ্র প্রসাদ। ফল হয়েছিল প্রত্যাশিত। ভোটের বাক্সে অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি জীতেন্দ্রর।
সনিয়ার পূর্বসূরি সীতারাম কেশরির সভাপতি হওয়ার ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হয়। প্রার্থী ছিলেন দুই হেভিওয়েট রাজেশ পাইলট ও শরদ পাওয়ার। সেবারও জানাই ছিল ভাল ব্যবধানেই জিতবেন সীতারাম। ফলও তাই-ই হয়েছিল। কারণ, তাঁর উপর ছিল সনিয়ার সমর্থন। যদিও সনিয়া তখন খাতায় কলমে কংগ্রেসের কেউ নন, এমনকী সাধারণ সদস্য পর্যন্ত ছিলেন না।
ফল অনিশ্চিত ছিল এবং শেষে চমকে দেওয়া রেজাল্ট হয়ে অন্তত দু’বার। ১৯৩৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর পছন্দের প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে বিজয়ী হন সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীনতার পর পুরুষোত্তম দাস ট্যান্ডন কংগ্রেস সভাপতি হন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পছন্দের প্রার্থীকে হারিয়ে।
তবে স্বাধীনতার পর ১১ বার কংগ্রেস সভাপতি পদে অ-গান্ধী নেতা বসেছেন। যদিও এক-দু’বারের ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিবারই গান্ধী পরিবারের পছন্দের নেতার ভাগ্যেই জুটেছে ওই পদ। এবারও তা হবে কি না সেটাই এক হাজার কোটি টাকার প্রশ্ন।