শেষ আপডেট: 8th January 2025 18:38
সুমন বটব্যাল
এ যেন সেই রবি ঠাকুরের ছোট গল্পের সংজ্ঞার মতো। ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর রাজ্যের জঙ্গলমহল দাপিয়ে, ঘুম পাড়ানি গুলিতে জব্দ হয়ে ৩১ ডিসেম্বর রাজ্য থেকে নিজের পুরনো ঠিকানা ওড়িশায় ফিরে গিয়েছে বাঘিনি জিনাত। তবু বনকর্তা থেকে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঘুরে ফিরে উঠে আসছে সেই বাঘিনিরই কথা!
এহেন চর্চার নেপথ্যে যথেষ্ট কারণও রয়েছে বলে মনে করছেন বনকর্তারা। কারণ, বাঘিনি ফিরতেই বাঘের আগমন! স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, শুধুই পথ ভুলে নাকি জিনাতের প্রেমেই পুরুলিয়া সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? নাকি ভালমন্দ খাবারের খোঁজেই পুরুলিয়ার জঙ্গলের অদূরে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার?
বন দফতরের পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহর কথায়, "বাঘিনির খোঁজেই বাঘ এসেছিল কিনা, তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে ভাল রেস্তোরাঁ দেখলে আমরা কী করি? খাবার খেতে যায় তো! তাহলে বাঘের কী দোষ!" খানিক থেমে যোগ করেছে, "পছন্দমতো জঙ্গল পেলে ওরাই বা সেখানে আসবে না কেন!"
এ ব্যাপারে ডিসেম্বরে বাঘিনির পাশে দাঁড়িয়ে কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো দ্য ওয়ালকে বলেছিলেন, "একসময় বনাঞ্চল খালি হয়ে যাচ্ছিল। বন দফতরের তরফে রাজ্যে জঙ্গলবৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। জঙ্গলমহলে এখন শাল, অর্জুনের ঘন জঙ্গল আবার বাড়তে শুরু করেছে। আর জঙ্গলের ঘনত্ব বাড়লে সেখানে বাঘের উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক ঘটনা।"
একসময় কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য এবং প্রচণ্ড গরমে জঙ্গলে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় জঙ্গলমহলের বনাঞ্চল অনেকখানি খালি হয়ে গিয়েছিল। এরপরই গত কয়েক বছরে বন দফতরের তরফে রাজ্যে জঙ্গলবৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। যার নিটফল, শাল, অর্জুনের ঘন বনাঞ্চল এখন জঙ্গলমহল জুড়ে। শুধু জঙ্গলের ঘনত্ব বেড়েছে তাই নয়, ইদানীং সেখানে বন্য জীবজন্তুর সংখ্যাও বেড়েছে। ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যে শতকরা .৭ শতাংশ বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে।
বনকর্তাদের কথায়, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট জলাশয়ও। গভীর জঙ্গল আর জল হল বাঘের জন্য আদর্শ জায়গা। ফলে হাতির পর এবার বছর বছর বাঘ-বাঘিনির আগমন ঘটলেও চমকে ওঠার কিছু নেই বলেই মনে করছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, সাড়ে তিন দশক আগে এভাবেই খাবারের খোঁজে ঝাড়খণ্ড থেকে প্রথমে দু একটি হাতি বাংলায় ঢুকতে শুরু করেছিল। পরে তারা দলবেঁধে আসতে শুরু করে ফি-শীতে। পরে মানুষের সংস্পর্শে আসার কারণে দল থেকে বিতাড়িত হয়ে সেই দলছুট হাতির একাংশ 'রেসিডেন্সিয়াল' হয়ে রয়ে যায় জঙ্গলমহলে।
বন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গলে 'রেসিডেন্সিয়াল' হাতির সংখ্যা প্রায় ১০০টি। এক বনকর্তার সরস মন্তব্য, "১০০ না হোক, আগামী দিনে সুন্দরবন ছাড়া বাংলার জঙ্গলে যদি ২-৪টি বাঘও থাকে, তাহলে পরিস্থিতিটা কেমন হবে ভাবুন তো!"
একই সঙ্গে ওই বনকর্তা বলছেন, "আমরা যেভাবে জঙ্গলকে গুরুত্ব দিয়ে বাড়াচ্ছি, তাতে এমন সম্ভাবনা অচিরেই বাস্তবায়িত হতে পারে!"