বন্যার্তদের সাহায্যে পুলিশ।
শেষ আপডেট: 19th September 2024 10:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এবার সোশ্যাল মিডিয়া মারফতও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল পুলিশ। বন্যা সংক্রান্ত কোনও বিপদে কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, তাহলে উদ্ধারসামগ্রী পৌঁছে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিল।
বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন রাজ্যের একাধিক জেলা। তার উপরে ডিভিসি লাগাতার জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক প্রান্তে রীতিমতো বন্যা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে জলবন্দি মানুষদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ।
স্পিডবোট, নৌকো নিয়ে বানভাসি এলাকাগুলিতে চলছে লাগাতার টহল। জায়গায় জায়গায় বিলি হচ্ছে ত্রাণ। মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে এলাকাবাসীদের। বন্যার্তদের বাঁচাতে পুলিশ-প্রশাসনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষও। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর পেয়েও এগিয়ে গেল পুলিশ।
গতকাল, বুধবার সন্ধেয় বন্যাপ্লাবিত বিভিন্ন জেলায় পুলিশ প্রশাসনের উদ্ধারকার্য ও ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। সেই পোস্টের কমেন্টেই হুগলি গ্রামীণ জেলার পুরশুড়া থানা এলাকার মির্জাপুরের বাসিন্দা অনুপম মাইতি জানান যে বহু স্থানীয় মানুষ অভুক্ত অবস্থায় রাস্তার উপরে বসে আছেন। অনুপম অনুরোধ করেন যদি পুলিশের তরফে কিছু সাহায্য করা যায়।
সেই কমেন্টটি নজরে আসা মাত্রই পুরশুড়া থানার টিম পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যান মির্জাপুর গ্রামে। রাস্তার উপর বসে থাকা অভুক্ত মানুষগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয় খাবার।
একথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে পুলিশ লেখে, 'দুর্গত মানুষের পাশে আমরা আছি, থাকব। যে কোনও সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের এই ফেসবুক পেজের মেসেঞ্জারে, সরাসরি থানায় বা জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে।'
*পাশে আছি*
— West Bengal Police (@WBPolice) September 19, 2024
গতকাল সন্ধ্যেয় বন্যাপ্লাবিত বিভিন্ন জেলায় পুলিশ প্রশাসনের উদ্ধারকার্য ও ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের বিষয়ে আমরা এই পেজে একটি পোস্ট করি। পোস্টের কমেন্টে হুগলি গ্রামীণ জেলার পুরশুড়া থানা এলাকার মির্জাপুরের বাসিন্দা অনুপম মাইতি জানান যে বহু স্থানীয় মানুষ অভুক্ত অবস্থায়… pic.twitter.com/U5QqENeCaR
বুধবার সকাল থেকেই দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা পুরোপুরি প্লাবিত। হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার বহু এলাকা আক্ষরিক অর্থেই জলের নীচে। জলে ভেসে মারা গেছে কেশপুরের ১০ বছর বয়সি এক শিশু। দাসপুরে ভেঙে পড়েছে বাড়ি।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। কথাও বলেছেন পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এবং জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির সঙ্গে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা, সেই খোঁজও নেন তিনি। বুধবার রাতে তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরেই থেকেছেন।
গত কয়েকদিনের টানা বৃ্ষ্টি এবং মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া জলের ফলে হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপরই বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়া, হুগলির একাধিক জায়গা পরিদর্শন করেন। টেলিফোনে কথা বলেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। কোন কোন এলাকা প্লাবিত, জলবন্দি কত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা-সবকিছুরই খোঁজ নেন।
এদিন বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়া হয়ে হুগলিতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। পুরশুড়ায় যাওয়ার পথে একটি সেতুর ওপরে বহু বানভাসি মানুষকে দেখে গাড়ি থামান। কথা বলেন বন্যা কবলিত মানুষজনের সঙ্গে। এরপরই ডিভিসির বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমি নিজে মঙ্গলবার ডিভিসির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। ডিভিসি আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল ধরে রাখতে পারতো। তবু পরিকল্পিতভাবে জল ছেড়ে বাংলাকে ডোবাল! এটা ম্যান মেড বন্যা।"