শেষ আপডেট: 27th September 2024 19:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ওএসডি-র বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের অফিস থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করে বলা হয়েছে, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের নাম করে টাকা তুলছেন ববি হাকিমের ওসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
একে তো এ ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি আন্দোলিত। তার উপর এ ব্যাপারে ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে তোলপাড় পড়ে গেল। এ ব্যাপারে ববি বলেছেন, “আমার ওএসডি-র বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ, তা তো আমাকেই বলা যেতে পারত। থানায় অভিযোগের কী দরকার ছিল? আমি জানলে তো আমি নিজেই বিভাগীয় তদন্ত করতাম।'
মেয়রের এ কথা নিয়েই দলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, পুরমন্ত্রী তথা মেয়রের এ কথা সেল্ফ গোল তথা আত্মঘাতী গোল। এর থেকে এই মানেই দাঁড়ায় যে ববি বলতে চাইছেন, অভিষেক পুলিশের কাছে গেলেন কেন? মেয়রকেই বলতে পারেন। উনি ব্যবস্থা নিতেন!
অনেকের মতে, মেয়রের এ কথা থেকে মনে হচ্ছে তিনি ব্যাপারটা ঘরোয়া ভাবে মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তা ছাড়া একজন সাংসদের নাম করে টাকা তোলা হল ফৌজদারি অপরাধ। সেই অপরাধের তদন্ত কি পুরসভা করতে পারে? তা তো পুলিশই করতে পারে। তাই মেয়র বলতেই পারতেন, পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়ে ভালই হয়েছে। কালীচরণ অন্যায় করেছেন প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হোক। কিন্তু ববি হাকিম যেভাবে বলেছেন, ‘থানায় যাওয়ার কী দরকার ছিল’, সেটাই একটা সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে।
ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, মেয়র ব্যাপারটা ধামা চাপা দেওয়ার কথা বলেননি বা তা বোঝাতে চাননি। উনি বোঝাতে চেয়েছেন, অভিষেকের অফিস পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর আগে তাঁকে জানাতে পারত। তিনিও বিভাগীয় তদন্ত করে দেখতেন।
কিন্তু ঘটনা হল, রাজনীতি সব সময়েই ধারণায় চলে। ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলের একাংশের মধ্যে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সাধারণের মধ্যেও হতে পারে।
তৃণমূলের মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের মধ্যে অনেক দিন ধরে একটা ঠাণ্ডা লড়াই চলছে বলে অনেকে মনে করেন। একুশ সালে বিধানসভা ভোটের পর অভিষেক দলের মধ্যে এক ব্যক্তি এক পদ নীতির বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কারণ, ফিরহাদ হাকিম তখন ছিলেন দুটি দফতরের (পুর এবং পরিবহণ) মন্ত্রী। সেই সঙ্গে কলকাতার মেয়র। তা ছাড়া সংগঠনেও সাধারণ সম্পাদকের পদ ছিল তাঁর। অভিষেক এক পদের সওয়াল করতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছিলেন ফিরহাদ হাকিমই। শেষমেশ দেখা যায়, পরিবহণ দফতর তাঁর হাত থেকে চলে যায়। তবে এখনও ববির সরকারি ভাবে দুটি পদ।
এবার লোকসভা ভোটের সময়েও এ কথা দলের মধ্যে চাউর হয়েছিল যে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে মেয়ে প্রিয়দর্শিনী হাকিমকে প্রার্থী করার চেষ্টায় রয়েছেন মেয়র। কিন্তু তাতে বাধ সেধেছেন অভিষেক। শেষমেশ বসিরহাটে প্রার্থী করা হয় হাজি নুরুল ইসলামকে। নুরুল ভোটে জিতেছিলেন। তবে সম্প্রতি তাঁর অকাল মৃত্যু বসিরহাটে উপ নির্বাচন ফের অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তার আগে আবার ঘটে গেল এই ‘অভিযোগ -কাণ্ড’। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে।