শেষ আপডেট: 27th June 2022 09:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হরিদেবপুরে (Haridevpur) জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট (Electrocuted) হয়ে শিশুর মৃত্যুর (Child Death) ঘটনায় তদন্ত করার আশ্বাস দিলেন মেয়র ফিরহাদ ববি হাকিম (Firhad Hakim)। তিনি এদিন বলেন, 'কমিশনারকে আমি বলেছি, পুরো ঘটনা এনকোয়্যারি করতে হবে। আমাকে একটা রিপোর্ট দিতে হবে।'
গতকাল, রবিবার বিকেলে হরিদেবপুরের চাঁদার ভিলেজ এলাকায়, ৪১ পল্লি ক্লাবের কাছে জমা জলে বিদ্যুতের শক লেগে মৃত্যু হয়েছে এক নাবালকের। পুলিশ জানিয়েছে, ১২ বছরের ছেলেটির নাম নীতীশ যাদব।
গতকাল বৃষ্টির পরে হরিদেবপুর ও সংলগ্ন এলাকায় বেশ জল জমে যায়। বস্তুত, একটু বৃষ্টি হল কি হল না, জলের তলায় পথঘাট ডুবে যাওয়াই এই এলাকার দস্তুর। মৃত নাবালকের পরিবার সূত্রের খবর, কাল বিকেলে কোনও একটা কাজে ঘর থেকে বেরিয়েছিল সে। হয়তো কিছু কিনতে। হাতে ছোট একটা প্লাস্টিক ছিল তার। তাই নিয়ে জলভর্তি রাস্তায় হাঁটছিল। সম্ভবত জলে টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার ধারের একটি ল্যাম্পপোস্ট ধরে ফেলে সে। দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, স্পর্শেই লুকিয়ে আছে মৃত্যুর ছোবল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ল্যাম্পপোস্টটি ছুঁতেই ছিটকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়ে ছেলেটি। প্রায় আধ ঘণ্টা ওভাবেই পড়েছিল সে। পরনে লাল-নীল গেঞ্জি, খাকি প্যান্ট। এক হাতে প্লাস্টিক। নিষ্প্রাণ এই দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। কিন্তু সাহস করে এগোতেও পারেননি কেউ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয়ে।
এদিন মেয়র ববি হাকিম এই প্রসঙ্গে বলেন, 'পরিবার অভিযোগ করছে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আগে জানতে হবে, কী হয়েছিল। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা বলেছিলাম বর্ষার আগে যেন সমস্ত লাইট পোস্ট ঠিকঠাক থাকে। তাহলে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল, সেটা জানতে হবে। তার জন্য তদন্ত হবে।'
গতকাল এই মর্মান্তিক ঘটনার কিছু পরে সিইএসসি-র লোকজন এসে পৌঁছন ঘটনাস্থলে। তাঁরা প্রথমেই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করেন গোটা এলাকা। তার পরে ছোট্ট নীতীশকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বাঙুর হাসপাতালে। মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা এলাকা। এই জল জমার সমস্যা প্রাণ কেড়ে নিল ছোট্ট ছেলের!
মেয়র এদিন জানিয়েছেন, মৃত নীতীশ যাদব আদতে বিহারের বাসিন্দা। পুরসভা থেকে সমস্ত ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে বিহারে তার পরিবারের কাছে দেহ পাঠিয়ে দেওয়া যায়। মেয়রের কথায়, 'বাড়িতে যাঁদের শিশু আছে, তাঁরাই জানে কতটা ক্ষতি হল। যাইহোক, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবারের পাশে আমি আছি, যা সাহায্য লাগে আমি করব।'
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এমনই পরিণতি হয়েছিল দমদমের বান্ধবনগরের ক্লাস সিক্সের ছাত্রী অনুষ্কা ও পাখির। প্রতিদিনের মতো বিকেলে টিউশন পড়তে বেরিয়েছিল তারা। বান্ধবনগরের চারমাথার মোড়ে হাঁটুজল পেরিয়ে হাঁটছিল দুই বন্ধু। উল্টোদিক থেকে আসছিল গাড়ি, একপাশে সরতে গিয়ে ড্রেনে পড়ে যায় পাখি। সেখান থেকে উঠতে গিয়ে হাত দিয়ে ধরে ফেলে একটি ল্যাম্পপোস্ট। সঙ্গে সঙ্গে ২২০ ভোল্টের শক লেগে ছিটকে যায় সে।
বন্ধুর ওই অবস্থা দেখে তার দিকে হাত বাড়িয়ে তুলতে যায় অনুষ্কা। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে-ও। ঝরে যায় দু-দুটি তাজা প্রাণ।
গত বছরের এই ঘটনা থেকে যে এ শহর কোনও শিক্ষা নেয়নি, তা প্রমাণ হয়ে গেল আজ। ৯ মাসের মাথায় ফের একই কাণ্ড ঘটে গেল। অথচ এমন কিছু যে ভারী বৃষ্টি হয়েছে, তাও নয়। বলতে গেলে বর্ষা এখনও পুরোপুরি আসেইনি কলকাতায়। প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিতেই এমন জল জমে গেল। আগামী কয়েক দিনে কী হবে, সে নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে।
পুলিশের নিয়োগে প্রশ্নের ভাষা কী হবে? ইংরাজির দাবি খারিজ হাইকোর্টে