থানায় গিয়ে হয়রানির দিন শেষ। কিংবা তদন্তের জন্য এক থানার পুলিশকে অন্য থানা এলাকায় গিয়ে তদন্তের নথি জোগাড় করার জন্য হন্যে হয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না।
ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 21 June 2025 11:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: থানায় গিয়ে হয়রানির দিন শেষ। কিংবা তদন্তের জন্য এক থানার পুলিশকে অন্য থানা এলাকায় গিয়ে তদন্তের নথি জোগাড় করার জন্য হন্যে হয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না।
রাজ্যে এবার যে কোনও গুরুতর অপরাধ (Cognizable offence) ঘটলে অভিযোগকারীকে আর থানার সীমা নিয়ে ভাবতে হবে না। বরং থানায় পৌঁছে অভিযোগ জানালেই হবে। বাকি কাজ দ্রুততার সঙ্গে করবে পুলিশই।
এ ব্যাপারে গত ১৭ জুন ২০২৫, একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ডিরেক্টরেট। সমস্ত জেলা পুলিশ সুপার, কমিশনারেট, জিআরপি এবং এসসিআরবি-কে পাঠানো চিঠিতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, 'এখন থেকে রাজ্যের যে কোনও থানায় Zero FIR নেওয়া যাবে। অর্থাৎ ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার না হলেও মামলা রুজু করা যাবে।'
কী এই Zero FIR?
নতুন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS), ২০২৩-এর ১৭৩(১) ধারা অনুযায়ী, কোনও গুরুতর অপরাধ ঘটলে, অভিযোগকারী রাজ্যের যেকোনও থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এরপর সেই FIR সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে, যাদের ভূ-সীমার মধ্যে অপরাধটি ঘটেছে। উদ্দেশ্য একটাই— বিচারে দেরি না করে দ্রুত বিচার পাওয়ার পথ খুলে দেওয়া।
SOP কী বলছে?
পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে এ ব্যাপারে জটিলতা এড়াতে ধাপে ধাপে প্রতিটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম ধাপ: লিখিত, মৌখিক বা ই-মেইলে অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে। ইমেইলে এলে ৩ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীকে থানায় এনে সই করাতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: জেনারেল ডায়ারি করতে হবে, যাতে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণী লিখতে হবে।
তৃতীয় ধাপ: Zero FIR রেজিস্ট্রেশন। অভিযোগকারীর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য (নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, লিঙ্গ, ইমেল), অপরাধের সময়, স্থান, বর্ণনা, সাক্ষী ও প্রমাণ (যদি থাকে)—এইসব CCTNS-এ আপলোড করতে হবে।
চতুর্থ ধাপ: অভিযোগকারীর হাতে FIR কপি তুলে দিতে হবে একেবারে বিনামূল্যে।
পঞ্চম ধাপ: জরুরি পদক্ষেপ।যেমন ধর্ষণের অভিযোগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক।
FIR ট্রান্সফার: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
Zero FIR একবার রেজিস্টার হলে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা সংশ্লিষ্ট থানায় ট্রান্সফার করতে হবে CCTNS বা নির্দিষ্ট ইমেল এর মাধ্যমে। অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাগজপত্র পাঠিয়ে দিতে হবে। অভিযোগকারীকেও জানাতে হবে FIR কোথায় পাঠানো হল, সেই থানার যোগাযোগের বিশদ তথ্যসহ।
ফলোআপ ও নজরদারি
যে থানা অভিযোগটি পাবে, তারা Zero FIR-কে রেগুলার FIR-এ রূপান্তর করবে এবং BNSS ১৭৩(৩) অনুযায়ী প্রাথমিক তদন্ত শুরু করবে।
রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক
প্রতিটি থানায় এখন থেকে 'Zero FIR Conversion Register' রাখতে হবে, যাতে সমস্ত Zero FIR-এর তথ্য নথিভুক্ত থাকবে। FIR রূপান্তর না হলে কেন হয়নি, তাও লিখতে হবে।
SP/CP-রা প্রতিদিনের রিপোর্টে এসব FIR অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং একজন Nodal Officer নিয়োগ করবেন যিনি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে FIR ট্রান্সফার এবং রূপান্তর নিশ্চিত করবেন।
গাফিলতি চলবে না
কোনও থানার ওসি যদি jurisdictional ground দেখিয়ে FIR না নেন, তাহলে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) অনুযায়ী তা হবে ডিউটি পালন না করার শামিল এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
অর্থাৎ এই নির্দেশিকায় পরিষ্কার যে, অপরাধ ঘটলে অভিযোগকারীর প্রাথমিক কাজ এখন শুধু পুলিশের কাছে পৌঁছনো। FIR কোথায় হবে, সেটার দায় নিচ্ছে পুলিশ নিজেই। একে একদিকে যেমন দ্রুত ন্যায়ের দিকেই এগিয়ে যাওয়া বলা যায়, তেমনই এটাও স্পষ্ট যে নতুন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসনের কাজের ধরনেও বড় পরিবর্তন আসবে।
এক পুলিশ কর্তার কথায়, "এর ফলে তদন্তে গতিও আসবে।" কী রকম? ওই পুলিশ কর্তার কথায়, ধরা যাক ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে ঘটেছে। কিন্তু অপরাধী হয়তো দক্ষিণ ২৪ পরগণার সোনারপুরের বাসিন্দা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথির জন্য পুলিশকে এতদিন অন্য থানার ওপরে নির্ভর করতে হত। এক্ষেত্রে অনেকসময় অনেক গড়িমসিও দেখা যেত। থানার সীমানা নিয়েও টানাটানি শুরু হত। এবার তা আর হবে না। কারণ, সবটাই সকলের নখদর্পণে থাকবে। কেউ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।