দ্য ওয়াল ব্যুরো: বৈশাখী গরম একেবারে হাড়-মজ্জা জ্বালিয়ে দিচ্ছে। কোথাও ছিটেফোঁটা ঠান্ডা হাওয়া নেই। দিন হোক বা রাত, দমকা গরম হাওয়া জ্বালিয়েপুড়িয়ে দিচ্ছে। বেলা ১১টার পর থেকেই সূয্যিমামা যেন মধ্যগগনে। ঠা ঠা রোদে বেরোলেই শরীর খারাপ করছে। এক্কেবারে যাকে বলে পিচ গলা গরম। দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের জেলাগুলিতে গা চিড়বিড়ে গরম পড়ে ঠিকই, তাই বলে খাস কলকাতায় ৪০ ডিগ্রি?

আগামী সময়টা যেন মানসচক্ষে দেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জলবায়ু যখন তার রকমসকম বদলাতে শুরু করেনি তখনই তিনি ‘রুদ্র’ বৈশাখের রূপ বর্ণনা করেছিলেন-- ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে   হৃদয় তৃষায় হানে রে/ রজনী নিদ্রাহীন,   দীর্ঘ দগ্ধ দিন’। এ শহরের অবস্থাও এখন ঠিক তেমনই।

এ তো কিছুই নয়। গরমের পাল্লা ভারী হওয়ার এখনও অনেকটাই বাকি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আঞ্চলিক অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, আরও দুই থেকে তিন দিন চালিয়ে ব্যাট করবে হাড়জ্বালানো গরম। শনি ও রবিবারের মধ্যে কলকাতায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে। তার মানে বেলা চড়লেই ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাবে গরম। রিয়েল ফিল হবে আরও বেশি।

রাজস্থানের মরু শহরগুলিতে এমন ৪২, ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠে গ্রীষ্মে। আবহাওয়া ভেল্কিবাজিতে মহানগরেও গরমের কাঁটা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলছে। দক্ষিণবঙ্গে বাঁকুড়া জেলায় সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতে পারে পারদ। বীরভূম, বর্ধমানে এখনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে।

পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমের গরম হাওয়ার দমকে চরম তাপপ্রবাহ চলবে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। আগামী ২৪ ঘন্টায় পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমানে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হবে। সিভিয়ার হিটওয়েভ অ্যালার্ট জারি হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম জেলায়। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতে তাপপ্রবাহ চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।

আপাতত মঙ্গলবার অবধি অগ্নিবাণ ফালাফালা করবে বঙ্গবাসীকে। তারপর থেকে আবহাওয়ার অল্পসল্প বদল আসতে পারে। আলিপুর জানিয়েছে, সোমবার থেকে বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে। এর প্রভাবে জলীয় বাষ্প ঢুকবে বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে। বঙ্গোপসাগরে বিপরীত ঘূর্ণাবর্তে যে জলীয় বাষ্প ঢুকবে তাই বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করবে। এর থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। উপকূল সংলগ্ন জেলাগুলিতে স্বস্তির বৃষ্টি নামতে পারে বুধবার থেকে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।

দক্ষিণ যখন পুড়ছে, তখন উত্তরে আবহাওয়া অনেক আরামদায়ক। পাহাড়ি পাঁচ জেলায় হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তবে সমতলের দিকের মালদহ ও দিনাজপুরে  চরম ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে আরও কয়েকদিন।