অগ্নিমিত্রা পাল ও তাপস পাল
শেষ আপডেট: 15 February 2025 17:02
রাজনীতির ময়দানে 'ভেতরে জ্বলিছে তাঁর বহ্নি'। নামে অগ্নি থাকলেও মিতে পাতিয়েছেন আগুনকে। অগ্নিমিত্রা পালের মনের লেনদেন কোনও রাজনীতির ধার ধারে না। তাঁর প্রেমনীতিতে অনেক কিছুই আছে যা রাজনীতি বহির্ভূত। দ্য ওয়াল তাঁর মনের অন্দরে ঢুকে হাট করে খোলা সেই বাইরেটারই সন্ধান করেছে।
সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি দেখুন
বিজেপি বিধায়কের কাছে প্রেম মানে সম্মান, ত্যাগ আর অ্যাডজাস্টমেন্ট। সাহিত্যে মজা করে বলা হয় প্রেমে-পড়া আর রাজনীতি করার মধ্যে মেটাফরিক মিল এই যে, মানুষ তারুণ্যে প্রেমে পড়ে সুন্দর মুখ দেখে, আর তরুণোত্তীর্ণে শরীর দেখে; তেমনি তরুণ বয়সে রাজনীতি করে আদর্শ দেখে আর বার্ধক্যে দেখে মন্ত্রীত্ব। আলোচনার বিষয়বস্তু এখানে অগ্নিমিত্রার তারুণ্যের সময়টা নিয়ে। বিজেপি নেত্রী সেই সময়ে টুকি দিয়ে জানালেন, "ছোটবেলায় সানি দেওলের প্রেমে পড়েছিলাম। ক্লাস এইটে একটা সিনেমার প্রোমোশনে উনি এসেছিলেন। তখন প্রথম সামনে থেকে দেখি। বাড়িতে ওঁর যে পোস্টারটা ছিল সেটা নিয়ে গিয়ে সই এনেছিলাম।"
১৯৮১-তে 'সাহেব' ছবিটি সবে মুক্তি পেয়েছে। স্কুলপাঠী অগ্নিমিত্রা বাসে করে চিত্রার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হৃদি ভাসালেন অন্য এক তরুণের পোস্টার দেখে, তাপস পাল। কোঁকড়া, ঝাঁকড়া চুলের তাপস পাল তখন অগ্নিমিত্রার হার্টথ্রব। স্কুলে যেতে-আসতে সিনেমা হলের সামনে সাঁটানো সেই বিরাট পোস্টারে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকাই ছিল রোজনামচা। বিজেপি বিধায়ক তথা ডিজাইনার বলেন, "তাপসদার একটি সিনেমায় আমি পোশাকের দায়িত্বে ছিলাম। তখন অনেকটা ওজন বেড়িয়ে ফেলেছেন তিনি। উনি হয়তো শেষের দিকে অন্য রাজনৈতিক দলে গেছিলেন । তখনও তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। বোউদির সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে। মতাদর্শগত ফারাক তো ছিলই, তিনি যে মহিলাদের উদ্দেশে মন্তব্য করেছিলেন, তার প্রতিবাদও আমাই করেছিলাম।" শুধু তাই নয়, তরুণী অগ্নিমিত্রা সাংঘাতিক প্রেমে পড়েছিলেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন, ঋষি কাপুরেরও।
ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে উপহার আদানপ্রদান, ঘোরা-বেড়ানো, জমিয়ে ভূরিভোজ, এ সব এখন দিব্যি উপভোগ করেন প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে দম্পতিরাও। খাদ্যপ্রেমীদের কাছে আলাদা করে ভালবাসার দিনের মাহাত্ম্য থাক বা না থাক বাঙালি মাত্রই জিভে প্রেম। অগ্নিমিত্রাও আলাদা নন। তবে রেঁধে খাওয়াতে লবডঙ্কা, স্বীকার করলেন নিজেই।
কিন্তু এখানে আলোচনার বিষয় খানিকটা গুরুগম্ভীর। হিন্দুধর্মে মানবেতর প্রাণীকে অবতার ভাবার গল্পটা পৌরাণিক যুগেই শুরু হয়েছিল। যে কারণে গো মাংস প্রসঙ্গ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও পেটের শান্তিতে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। খাদ্যপ্রেমীক অগ্নিমিত্রা কীভাবে দেখেন বিষয়টাকে? "হিন্দু পরিবারে জন্মেছি। ছোট থেকেই গোরুকে আমরা মা হিসেবে দেখে এসেছি। যাকে মা হিসেবে দেখি তার মাংস তো আমরা খেতে পারি না। সেই হিসেবে আমি গো-মাংস খাই না। আমার পরিবারের কেউই এখনও অবধি সেই পথে হাঁটেনি। তবে বাকি কেউ যদি গোরুর মাংস খায় তাতে নিজের অস্বস্তি হচ্ছে বলেই যে তাদের আক্রমণ করতে হবে সে ব্যাপারে আপত্তি আছে।" বিজেপি বিধায়ক মনে করেন, গোরুর মাংস খেলেই তাঁর ধর্ম চলে গেল, আর যে খায়নি সে যে খুব সৎ, সনাতনী হিন্দু তেমনটা একেবারেই নয়।
গোমাংস খেলে জাত যায়, এই মধ্যযুগীয় সংস্কার থেকেই বিশ্বাসী হিন্দুদের গোমাংস খাইয়ে দিয়েছিলেন বিরুদ্ধ ধর্মের মানুষেরা। রবীন্দ্রনাথের বংশেও এই পতনের গল্প আছে। তবে এ তো কোনও পতনের গল্প নয়। অন্যদিকে শীতও শহর ছেড়েছে পারদ চড়িয়ে। সান্ধকালীন কলকাতায় অগ্নিমিত্রার বার্তা শুধু রাজনৈতিক নয়, প্রেমনীতিকও। যে কারণে বিজেপি নেত্রী নিজেই আড্ডার শেষ করলেন এই বলে, "যদি বন্ধু হও যদি বাড়াও হাত, জেনো থামবে ঝড় মুছে যাবে এই রাত।"