শেষ আপডেট: 26th October 2024 10:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মেয়ে বিছানায় শোয়া। মনে হবে ঘুমোচ্ছে। অন্যদিকে মা ঘরের মধ্যে পায়চারি করছেন। বাবা গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বুঝতে পারেন মেয়ে বেঁচে নেই। মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। গা ঠান্ডা।
মৃত মেয়ের দিকে তাকিয়েই মা বললেন, ‘বড় হচ্ছে তো। অন্যেরা ওর উপর অত্যাচার করবে। সেটা তো হতে দিতে পারি না! এখন আর কেউ ওর কিচ্ছু করতে পারবে না।’
হতবাক তদন্তকারীরা। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘সংবেদনশীলতার সঙ্গেই আমরা তদন্ত করছি। মৃতের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।’
ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী ব্যারাকপুর আনন্দপুরীর বাসিন্দা। তাঁদের একমাত্র মেয়ে রাজন্যা ঘোষ। বয়স ১১। বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েকে নিয়ে ঘুমোতে যান মা। পরদিন দুপুর পেরিয়ে গেলেও দরজা না খোলেননি। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি। অগত্যা প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন ইন্দ্রজিৎ। তাতেও কাজ না হওয়ায় টিটাগড় থানায় খবর দিলে একতলার দরজা ভেঙে পুলিশ আধিকারিকরা ভেতরে ঢুকে দেখেন, ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।
মৃতের মায়ের সঙ্গে কথা বলে গোটা ঘটনা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসাও চলছে। রাতেই ঘুমন্ত মেয়েকে গোলা টিপে মেরে ফেলেন তিনি। ইতিমধ্যেই মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইন্দ্রজিৎ বলছেন, অস্বাভাবিক আচরণ করলেও মেয়েকে সবসময় আগলে রাখতেন স্ত্রী। মেয়ের শরীর খারাপ হলে অস্থির হয়ে উঠতেন।
প্রতিবেশীরা বলছেন, নিয়মিত আরজি করের খবর দেখতেন রাজন্যার মা। হতে পারে সেই থেকেই কোনও ভয় কাজ করছিল তাঁর মধ্যে। আর তাই মেয়েকে সবার হাত থেকে বাঁচাতে এহেন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অসুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা একটা বড় ব্যাপার। যেখানে সাধারণ মানুষ এসব ঘটনায় নিজেদের ঠিক রাখতে পারছেন না সেখানে স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে কতটা সাংঘাতিক প্রভাব পড়ে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।