মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বীরবাহা হাঁসদা
শেষ আপডেট: 10th December 2024 07:18
একটা সময় রাজ্যে হাতির সংখ্যা কমতে কমতে পঁচাত্তরে এসে ঠেকেছিল। বন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সেই সংখ্যাটা প্রায় ৮০০! শুধু তাই নয়, যেভাবে চক্রাকারে হাতির সংখ্যা বাড়ছে তাতে হস্তীকূলের প্রজননে এখনই লাগাম না টানতে পারলে আগামীদিনে সংখ্যাটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন বন দফতরের কর্তারা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্বয়ং বনমন্ত্রী। পরিস্থিতি বিচার করে ইতিমধ্যে হাতির নিবীর্যকরণে জোর দিতে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে দু দু'বার চিঠি লেখা হলেও তার কোনও সদুত্তর আসেনি বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা দ্য ওয়ালকে বলেন, একদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে হাতির প্রজনন বাড়ছে অন্যদিকে প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও প্রতিবেশী দেশ নেপাল থেকে বছরভরই হাতি ঢুকছে রাজ্যে। এর ফলে জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে বাড়ছে হাতির হামলার ঘটনা। হাতির প্রজননে রাশ টানতে কেন্দ্রকে দু'বার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও কেন্দ্র কোন পদক্ষেপ করেনি।
হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীও। সূত্রের খবর, সোমবার এ ব্যাপারে বিধানসভায় বনমন্ত্রী বীরবাহার কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, "তোমার হাতির সমস্যা মিটেছে?" দুদিকে ঘাড় নেড়ে বীরবাহা বোঝান, সমস্যা মেটেনি। মমতা বলেন, "এই সমস্যাটা দ্রুত মেটাতে হবে।"
হস্তী বিশেষজ্ঞদের কথায়, যেহারে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই তুলনায় জঙ্গল কম। তার ওপর ইদানীং হাতির খাদ্যাভাসেও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। একসময় জঙ্গল থেকে গ্রামে ঢুকে হাতি স্রেফ জমির ধান কিংবা শাক সবজি খেত।
বছর কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে এক ফুচকা বিক্রেতার দোকানে হানা দিয়ে ফুচকাও খেতে দেখা গিয়েছিল হাতিকে। তারও আগে খাবারের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে একবার কোলাঘাট সেতুর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল একটি দাঁতাল। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দেওয়ার এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
যার নিটফল, হাতির হানায় বছর বছর জঙ্গল লাগায়ো এলাকায় প্রাণ হানির ঘটনাও বাড়ছে। বন দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হাতির হানায় রাজ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এবছরে এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর জানা যাচ্ছে।
গত ২১ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামে হাতির সামনে পড়ে যান বাদল মুর্মু (৩৮) নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে দাঁতাল। ফলে হাতিকে ঘিরে ইদানীং গ্রামাঞ্চলে আতঙ্ক যেমন বাড়ছে তেমনই মানুষের ক্ষোভও চড়ছে। এক বনকর্তার কথায়, "যেভাবে রাজ্যে হাতির সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমরা উভয় সঙ্কটে। এর হাত থেকে রেহাই পেতে গেলে অবিলম্বে হাতির প্রজনন ঠেকাতে হবে।"
এছাড়াও রয়েছে রেসিডেন্সিয়াল হাতির সমস্যা। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা হাতির দলের একটি বা দুটি হাতি পথ ভুলে দলছুট হয়ে যায়। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে পৌঁছে মানুষের সান্নিধ্যে চলে এলে সেই হাতিকে আর দলে ফিরিয়ে নেয় না বাকি দল। এমনকী হুল্লা পার্টির সাহায্যে বনকর্মীরা সেই হাতিকে দলে ফেরালেও দল তাকে নেয় না। ফলে সেটি লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলেই রয়ে যায়। রাজ্যে এরকম রেসিডেন্সিয়াল হাতির সংখ্যাও অনেকগুলি।
বনমন্ত্রীর আক্ষেপ, "ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, নেপাল থেকে বছরভরই হাতি আসছে। ওপাশ থেকে ইনকামিং হচ্ছে, কিন্তু সম সংখ্যক আউট গোয়িং হচ্ছে না। ফলে বছর বছর এমনিতেই বিভিন্ন জঙ্গলে বাড়ছে রেসিডেন্সিয়াল হাতির সংখ্যা!" এক বনকর্তার কথায়,"তার ওপর ওদের প্রজননের যা রেট, তাতে এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের রক্ষা করা আরও দুরূহ হয়ে উঠবে।"