শেষ আপডেট: 6th July 2023 03:23
মাস খানেক আগের ঘটনা, বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট তখনও ঘোষণা হয়নি। দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাহর সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক ভাল, অভিমান-আবদার সবই চলে। জানা গিয়েছিল, অমিত শাহকে শুভেন্দু বলেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিলে দিল্লি যেন সেই বাবদ টাকা না চায়।
তারপর দেখা গেল, পঞ্চায়েত হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়, এবং প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এজন্য কেন্দ্র কোনও টাকা চাইতে পারবে না।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রের কাছে মোট ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে। এর মধ্যে ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী ইতিমধ্যে রাজ্যে এসে গিয়েছে। আরও ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী আজকালের মধ্যেই বাংলায় ঢুকবে। এরই মধ্যে বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বাহিনীর থাকাখাওয়া বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা চাইল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
এখনে একটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থা করছে না। তা শুনে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ কমিশনকে জানিয়ে দেয়, ন্যূনতম বন্দোবস্ত কমিশনকে করতে হবে। সে ব্যাপারে রিপোর্ট হাইকোর্টে পেশও করতে হবে কমিশনকে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সেই বন্দোবস্ত করেছে। তার পর বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডিরেক্টর সুষমা চৌহানকে চিঠি লিখে স্পষ্ট বলেছে, বাহিনীর খোরাকি, গাড়ি ঘোড়া বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। সেই টাকা যেন দ্রুত পাঠানোর বন্দোবস্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডিরেক্টরকে লিখেছেন, “এ ব্যাপারে আপনকে গত ২৭ জুনের চিঠির (III-11029/1/2023-G/P-II dated 27.06.2023) কথা স্মরণ করাতে চাই। যেখানে আপনি ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনীর জন্য ন্যূনতম বন্দোবস্ত করতে বলেছিলেন।”
তাৎপর্যপূর্ণ হল, কমিশনের এই চিঠি থেকে এই ধারণা হচ্ছে যে শুধু ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনীর থাকা খাওয়ার জন্য ৩৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনীর জন্য এই অনুপাতে আরও টাকা চাইতে পারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
কোন কোন খাতে এই খরচ হবে তার একটা তালিকাও দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তা হল, ভোটগ্রহণ ও গণনার দিন ‘ডিউটি’-র জন্য ভাতা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য গাড়ি, লঞ্চ ইত্যাদি ভাড়া করার খরচ, গাড়ির চালাক, খালাসিদের খোরাকি, অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা, বাহিনীর জওয়ানদের জন্য ভাতা (G.O. No. 1093-PL dated 25.04.2019) ইত্যাদি।
কমিশন সূত্রে খবর, সমস্ত জেলাশাসককে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকাখাওয়া ঘোরাফেরার জন্য যে খরচ হবে তার পাই পয়সার যেন হিসাব রাখা হয়। সেই হিসাবে কোনও গলদ যেন না থাকে। কারণ, কমিশনের কর্তারা মনে করছেন, এই খরচের হিসাব স্ক্রুটিনি করে দেখবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সামান্য এদিক ওদিক হলে সেটা নিয়েই রাষ্ট্র হতে পারে।
মুর্শিদাবাদ, কোচবিহারে সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী ও সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন, ষড়যন্ত্র বলছেন অধীর