শেষ আপডেট: 2nd January 2025 19:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিয়ে আদালত ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির দড়ি টানাটানি খেলা শুরু। প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা দাবি করে আসছেন এই মামলায় বালুর প্রচুর হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে। সে প্রসঙ্গেই এদিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করে আদালতের প্রশ্ন, হিসাব বহির্ভূত যা সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে, রেশন দুর্নীতির মাধ্যমেই যে তা করেছেন জ্যোতিপ্রিয়, তার প্রমাণ কোথায়?
বৃহস্পতিবারই রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন ইডি প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিনের বিরোধিতা করে। পাল্টা আদালত জানতে চায় আপনারা যেটা দাবি করছেন তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই।
এমন প্রশ্ন উঠতেই পাল্টা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জবাব, তারা নিশ্চিত রেশন দুর্নীতি মামলার টাকা নয়ছয় করেই হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি বাড়িয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। যদিও তার সপক্ষে এদিন আদালতে একাধিক যুক্তিও দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, এই দুর্নীতি হিমালয়ের মতো।
এদিন বিচারক জানতে চান, নদিয়ার এফআইআর থেকে এই সংক্রান্ত তদন্ত শুরু হয়েছিল, সেখানে সাধারণ চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাহলে সেই অভিযোগকে কেন দুর্নীতি বলে তুলে ধরতে চাইছে ইডি? আদালতের আরও বক্তব্য, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের যে সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে তা অন্য কোনও দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তিও হতে পারে। আপনারা কীভাবে জোর গলায় বলছেন রেশন দুর্নীতি থেকেই তিনি ওই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন?
উত্তরে ইডির তরফে জানানো হয়েছে, চুরির এফআইআর থেকে তদন্ত শুরু হয়েছিল সে কথা একেবারেই ঠিক। পরে তদন্তে উঠে আসে বড়সড় দুর্নীতির গল্প। ইডি আধিকারিকদের মতে, রেশন ডিলার থেকে শুরু করে উপর এবং নীচমহলের সকলেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাই কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও দায়ের করেনি। সে কারণেই একে সাধারণ চুরি বলা যায় না।
ইডির আইনজীবী জানান, ছোট ছোট চুরি করতে করতে একসময়ে তা বড় দুর্নীতির আকার নিয়েছে। প্রত্যেক উপভোক্তার থেকে রেশনের পরিমাণ অল্প অল্প করে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই সামান্য ঘাটতির জন্য কেউ অভিযোগ দায়ের করেননি। রেশন মামলার তদন্তে নেমে একাধিক সরকারি নথি এবং সরকারি অফিসারের সিল পাওয়া গিয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছিল ইডি। সেই প্রসঙ্গে এদিন বিচারকের প্রশ্ন, ওই সরকারি আধিকারিকদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি? কেনই বা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি? ইডি জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতির সমগ্র বিষয়টি এক সুতোয় বাঁধা ছিল। এক জন শক্তিশালী কেউ গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
এই সংক্রান্ত মামলার গত শুনানিতে ইডি দাবি করেছিল, জ্যোতিপ্রিয় আদতে 'কিংমেকার'! জামিন পেলেই মামলায় প্রভাব খাটাতে পারেন। ইডি বলেছিল, মন্ত্রীর পদে না থাকলেও জ্যোতিপ্রিয় এখনও প্রভাবশালী। রাজনৈতিকভাবে তিনি প্রভাব খাটাতে এখনও সক্ষম। 'কিং' না হলেও তিনি 'কিংমেকার'! আর শনিবারের মামলার শুনানিতে তাঁদের যুক্তি, দুর্নীতির একাধিক শাখা গিয়ে মিশেছে তাঁর কাছে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে রেশন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। সম্প্রতি তাঁকে 'কিংমেকার' বলে ইডির দাবি ছিল, এমনও মামলা রয়েছে যা এখনও অনুমোদন পাচ্ছে না তাঁর জন্য। তাই তাঁকে কোনওভাবে জামিন দেওয়া যাবে না।