শেষ আপডেট: 4th September 2023 10:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন পিনেডা জে ক্যাস্ত্রো। ৩১ বছরের যুবক ফিলিপিন্সের বাসিন্দা। কলকাতা থেকে জাহাজে চেপে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মারাত্মক পেটে ব্যথা ও বমি শুরু হয় তাঁর। কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে গেলে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা পরীক্ষা করেই বোঝেন, ক্ষুদ্রান্ত্রে আলসার (Duodenal ulcer) রয়েছে যুবকের। পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে। রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক। সেই পরিস্থিতি থেকে বিদেশি পর্যটককে প্রাণে বাঁচান ডাক্তারবাবুরা।
ডা. দেবকমল মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ডিওডিনামে বড়সড় আলসার (Duodenal ulcer) ধরা পড়ে রোগীর। পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রোগী হেমারেজিক শকে চলে গিয়েছিল। অনেক ইউনিট রক্ত দিয়ে রোগীকে প্রথমে স্থিতিশীল করা হয়। তারপর ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।”
ডাক্তারবাবু বলছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো পরিণতি হয়েছিল রোগীর। বেশি দেরি হলে অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠত। ডা. দেবকমল বলছেন, রোগীর অন্ত্রের পরিস্থিতি কেমন তা দেখতে আপার জিআই (গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল) এন্ডোস্কোপি করা হয় রোগীর। ডা. শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এন্ডোস্কোপি করেন। তাতেই ধরা পড়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে বড় আলসার হয়েছে রোগীর। তারপরেই উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে আলসার কমতে থাকে। রোগী অনেকটা স্থিতিশীল হয়ে ওঠেন।
পিনেডার আর্থ্রাইটিসের সমস্যা ছিল বলে পরে জানা যায়। ডাক্তারবাবু বলছেন, একটু সুস্থ হওয়ার পরে তিনি জানান যে তাঁর গাঁটে গাঁটে মারাত্মক ব্যথা ছিল ডাক্তারি ভাষায় একে বলে অ্যাকিউট গাউটি আর্থ্রাইটিস (Acute gouty arthritis)। সে জন্য তিনি নিয়মিত ওষুধ খেতেন। সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই আলসার হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যাও ছিল। সাইনোভিয়াল ফ্লুইডে ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল (Uric Acid Crystal) ধরা পড়েছে।
ডা. অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "রোগী যে অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তা ভয়ানক ছিল। পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েই যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় রোগীর কেস হিস্ট্রি, আগে কোনও রোগ ছিল কিনা এবং কী কী চিকিৎসা হয়েছিল তা জানা খুব জরুরি ছিল। যেহেতু রোগীর আত্মীয়দের পাওয়া যায়নি, তাই রোগের কারণ নির্ণয় করা জটিল ছিল। তবে রোগীর কয়েকজন সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে এবং নানারকম টেস্ট করে আমরা ধরতে পারি রোগী বেশ কয়েকবছর ধরে গাঁটের ব্যথায় ভুগছিলেন। সে জন্য কিছু ওষুধও খাচ্ছিলেন। তাছাড়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালও ধরা পড়ে রোগীর।"
ডাক্তারবাবু বলছেন, যুবকের রোগের ধরনকে বিরলই বলা যায়। কারণ শরীরের একাধিক জয়েন্টে ব্যথা ছিল তাঁর। সিঙ্গল জয়েন্ট পেন নয়, এক্ষেত্রে মাল্টিপল জয়েন্ট পেন ছিল। তবে রোগী এখন সুস্থতার দিকেই। ডাক্তারবাবু বলছেন, কিডনিতে ক্ষতর কারণে রোগীকে ডায়ালিসিস সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। এর ফলে রোগীর দেহের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্থিতিশীল হয়। তাঁর রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। আশা করা যায়, খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন তিনি।
আলসার কথার অর্থ ক্ষত। এই ক্ষত পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে হয় এবং তা থেকে জটিলতা তৈরি হয়। পরিপাকতন্ত্রে অ্যাসিড বেশি মাত্রায় তৈরি হলে আলসার হতে পারে। আবার অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে এই রোগ হয়। তখন সেই আলসারকে সংক্রমণ ঘটিত আলসার বলে।
সাধারণত দেখা যায়, খাদ্যথলি বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম ভাগে আলসার বাসা বাঁধতে শুরু করে। খাদ্যথলির ভিতর যে আলসার হয় তাকে বলে গ্যাস্ট্রিক আলসার। ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশে যে আলসার হয়, তাকে বলে ডিওডিনাম আলসার (Duodenal Ulcer) বলে।
ডিওডিনাম আলসারের (Duodenal ulcer) কতগুলো লক্ষণ থাকে। যেমন– বুকজ্বালা, পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা, খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফেঁপে থাকা, মুখ দিয়ে নুন জল ওঠা, গা বমি ইত্যাদি হলে বুঝতে হবে যে পেপটিক আলসার হলেও হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারতে ৩০ শতাংশ মহিলাই ভোগেন হাইপারটেনশনে! কেন নিঃশব্দে বাড়ছে প্রেসার
গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে, অর্থাৎ যদি খাদ্যথলিতে আলসার হয় তা হলে খাওয়ার পরেই পেট জ্বালা করবে। এই সময়ে রোগী খেতে ভয় পাবেন, খাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হবে।
ডিওডিনাম আলসার অর্থাৎ ক্ষুদ্রান্তে আলসার হলে, পেট খালি থাকলে বা দীর্ঘক্ষণ না খেলে পেটে জ্বালা করবে। অনেক সময় রাতে অনেকক্ষণ পেট খালি থাকলে, রোগীর পেটে জ্বালা শুরু হয়। বমি ভাব আসে। এর সঙ্গে যদি অন্য কোনও কোমর্বিডিটি থাকলে তাহলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।