শেষ আপডেট: 11th October 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতি চারদিন অন্তর একটি করে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। আজ, সোমবার ওড়িশার উপকূলের লঞ্চ প্যাড থেকে তীব্র বেগে ছুটে গিয়েছিল সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল নির্ভয়। তবে কিছু যান্ত্রিক সমস্যার জন্য নিক্ষেপের ৮ মিনিট পরেই মিসাইলের গতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ নির্ভয় মিসাইলের টেস্ট-ফায়ার হয় ওড়িশা উপকূলের লঞ্চ প্যাড থেকে। সূত্রের খবর, ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যাওয়ার পরেই তাতে কিছু গলদ দেখা দেয়। ৮ মিনিটের মধ্যেই তার গতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়। তবে এই যান্ত্রিক গলদ খুব দ্রুতই সারিয়ে নিয়ে ফের শক্তি প্রদর্শন করা হবে নির্ভয় ক্ষেপণাস্ত্রের। ডিআরডিও-র অ্যাডভ্যান্স সিস্টেম ল্যাবরেটরিতে এই ত্রুটি মেরামতের কাজ হচ্ছে। ডিআরডিও জানিয়েছে, নির্ভয় রকেট বুস্টার মিসাইলের পাল্লা হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ উৎক্ষেপণ স্থল থেকে হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যে শত্রু সেনার যে কোনও সামরিক পরিকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। লাদাখ সংঘাতের আবহে, ব্রাহ্মসের মতোই নির্ভয় মিসাইল সীমান্তে পাঠানোর তোড়জোড় করছে ভারত। নির্ভয় হল সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। ব্রাহ্মসের মতো শব্দের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে। সারফেস-টু-সারফেস, এয়ার-টু-সারফেস এবং সারফেস-টু-এয়ারে ছোড়া যায় এই ক্ষেপণাস্ত্র। যে কোনও শত্রু জাহাজ ধ্বংস করে দিতে পারে নির্ভয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য শক্তিশালী রকেট লঞ্চার তৈরি করেছে অ্যাডভান্সড সিস্টেম ল্যাবোরেটরি। এতে রয়েছে মাইক্রোইলেকট্রোমেকানিক্যাল সিস্টেম (MEMS)ও জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম। ৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১৫০০ কিলোগ্রাম। ২০০-৩০০ কিলোগ্রাম ওজনের ২৪টি ভিন্ন রকমের ওয়ারহেড রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ভয় হল দূরপাল্লার অর্থাৎ লং রেঞ্জ ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল (LRLACM) । যুদ্ধজাহাজ থেকে আগে হাজার কিলোমিটার পাল্লায় নিক্ষেপ করা যেত এই ক্ষেপণাস্ত্র। বর্তমানে এর নয়া ভার্সন যে কোনও যুদ্ধজাহাজ থেকে ১৫০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি নিক্ষেপ করা সম্ভব। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘ট্রাই-সার্ভিস’ মিসাইল সিস্টেম। এর এয়ার লঞ্চড ভার্সন আছে আবার ন্যাভাল-ভার্সনও রয়েছে। নতুন প্রযুক্তিতে গ্রাউন্ড লঞ্চের জন্যও এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োগ করতে পারবে বায়ুসেনা। সঠিক নিশানা লাগাতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করা সম্ভব। লাদাখ সীমান্ত সংঘাতের আবহেই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি প্রদর্শন করছে ভারত। কিছুদিন আগেই ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন করা হবে এই ব্রাহ্মস মিসাইল। তার জন্যও পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের প্রয়োজন ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্র তার উৎক্ষেপণ স্থল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। তবে এর চেয়েও বেশি ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রাহ্মসও প্রস্তুত আছে ডিআরডিও-র কাছে। ভারতের ‘মেন-ব্যাটল ট্যাঙ্ক’ অর্জুন থেকে সফল উৎক্ষেপণ করা হয়েছে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইলের। রুশ-ভারত যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক থেকেও এই মিসাইলের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। দেশের দুই শক্তিশালী যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক থেকেই যদি সফলভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়, তাহলে ভারতীয় বাহিনীর শক্তি আরও বাড়বে। অন্যদিকে, ওড়িশার হুইলার উপকূল থেকে স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও সফল। ভারত মসাহাগরে যেভাবে চিনের আধিপত্য বাড়ছে তাতে সমুদ্র-যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে বা শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ গোপনে হামলা চালাবার চেষ্টা করলে, সর্বশক্তি দিয়ে তা রুখে দিতে পারবে ‘স্মার্ট’ ক্ষেপণাস্ত্র।