শমীকের কথায়, “যাঁর যা পতাকা আছে, ওই পতাকাগুলো কিছুদিনের জন্য আলমারির মাথায় তুলে রাখুন। পথে নামুন, তৃণমূলকে সরান”।
শমীক ভট্টাচার্য।
শেষ আপডেট: 3 July 2025 14:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একুশের ক্ষত চব্বিশেও সারেনি। একই কাটাকুটি খেলা চলেছে। ছাব্বিশের নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তাই গোটা বাংলাকে বার্তা দিয়ে রাখতে চাইলেন বিজেপির নয়া রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য (Samik Bhattacharya)। বামেদের উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান তুলে যেন তাঁরা তৃণমূলের পাশে না দাঁড়ান। বরং আসন্ন বিধানসভা ভোটে সমষ্টিগত স্লোগান হওয়া উচিত তৃণমূলকে তাড়াও, তৃণমূলকে বিসর্জন দাও।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদের দায়িত্ব নেন শমীক। রাজনৈতিক জীবনে দক্ষিণ হাওড়ার যুব মোর্চার সভাপতি পদ থেকে তাঁর এই উত্তরণ বেশ নজরকাড়া। এহেন শমীক বৃহস্পতিবার তাঁর বক্তৃতার একেবারে শেষে পৌঁছে বলেন, “সিপিএমের সমস্ত ভাইবন্ধু ও কংগ্রেসিদের উদ্দেশে বলছি ভোটা কাটার রাস্তায় হেঁটে তৃণমূল কংগ্রেসকে ফিরিয়ে আনবেন না। তাহলে সরাসরি রাস্তায় নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিছিল করুন। নো ভোট টু বিজেপির আড়ালে চক্রান্তের রাজনীতি করবেন না”।
শমীকের কথায়, “যাঁর যা পতাকা আছে, ওই পতাকাগুলো কিছুদিনের জন্য আলমারির মাথায় তুলে রাখুন। পথে নামুন, তৃণমূলকে সরান”।
শমীকের এ কথার প্রেক্ষাপট রয়েছে। একুশের বিধানসভা ভোটের সময়ে বাংলায় বামপন্থীদের একাংশ স্লোগান তুলেছিল ‘নো ভোট টু বিজেপি।’ অর্থাৎ বিজেপিকে কোনও ভোট নয়। তার পরেও বাংলায় ৩৮.১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। চব্বিশের লোকসভা ভোটে দেখা যায়, বিজেপির সেই ভোট বিশেষ বাড়েনি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও ৩৮.৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে পদ্ম-দল। আর বাম-কংগ্রেস মিলে পেয়েছিল প্রায় ১১ শতাংশ ভোট। আর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের ফারাক ছিল ৭ শতাংশ।
বিজেপির এবার লক্ষ্য হল, ছাব্বিশের ভোটে বাংলায় ষোল আনা রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো। গোটা লড়াইটাই যাতে তৃণমূল বনাম বিজেপিতে পর্যবসিত হয়। অর্থাৎ বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে যে উদার হিন্দু ভোট রয়েছে তাও যেন বিজেপির বাক্সে চলে আসে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই সার বুঝ বুঝেই শুভেন্দু অধিকারী চড়া হিন্দুত্বের রাজনীতিতে নেমেছেন। কালীগঞ্জে সংখ্যালঘু পরিবারের শিশু কন্যা বোমার আঘাতে মারা গেলেও শুরুতেই সেখানে যায়নি বিজেপি। কারণ, বিজেপি ধরেই নিয়েছে সংখ্যালঘুরা তাদের ভোট দেবে না। তাই একমাত্র হিন্দুভোটের সম্পূর্ণ মেরুকরণেই মোক্ষলাভ হতে পারে। শুভেন্দুর মতোই এদিন সেই কৌশলেই শান দিয়েছেন শমীক। তবে ব্যক্তিগত ভাবে শমীক উগ্র হিন্দু নেতা নন, বরং অনেকটাই অটল বিহারী বাজপেয়ী ঘরানার উদার নেতা। তাই হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদারদের বার্তা দিতে শমীক এদিন বাংলায় বহুত্ববাদকে রক্ষার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়। বরং বিজেপিও চায় বাংলায় দুর্গাপুজোর বিসর্জন ও মহরমের মিছিল একই পাড়া দিয়ে যাক। আর তা শান্তিপূর্ণ ভাবে হোক।