দ্য ওয়াল ব্যুরো: রীতিমতো ভয়ে ভয়ে ছিলেন অর্থনীতিবিদ আশরফ হায়দরি। সদ্য পড়ে যাওয়া আফগান সরকারের অর্থমন্ত্রকের কর্মী ছিলেন তিনি। এখন সরকার নেই, দেশ দখল করেছে তালিবান। নতুন সরকার গড়ছে তারা। কখন ডাক পাঠায় তালিবান, সেই আতঙ্কেই দিন কাটছিল। অবশেষে এল নির্দেশ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি যেন কাজে যোগ দেন, জানিয়ে দিল তালিবান।
১৫ অগস্ট তালিবান কাবুল দখল করার পর থেকেই গোটা আফগানিস্তানে চরম অরাজকতা শুরু হয়। টালমাটাল পরিস্থিতিতে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েন সরকারি কর্মীরা। এবার কী হবে! কয়েক হাজার মানুষ কি তবে কাজ হারাতে চলেছেন! আশরফ হায়দারিও তাঁদের মতোই ভাবছিলেন কাজ হারানোর কথা। শেষমেশ কাজ হারায়নি, তালিবান ডেকেছে ফের কাজে। কিন্তু সেটাও কি আদৌ স্বস্তির বিষয়! তালিবান সরকারের আওতায় কাজ করতে হবে শেষমেশ!
৪৭ বছরের আশরফ হায়দারি সংবাদমাধ্যমকে বললেন, "তালিবানের এক কম্যান্ড্যার ফোন করেছিলেন। তিনি আমায় বলেন ভয় না পেতে, লুকিয়ে না থাকতে। দেশ চালানোর জন্য আমাদের মতো কর্মীদের কাজে ফেরা দরকার। ভিন্ দেশিরা সবাই আফগানিস্তান ছেড়ে নিজের নিজের দেশে ফিরে গেলে আমি যেন যত দ্রুত সম্ভব কাজে ফিরি।"
তবে এর আগের তালিবানি শাসনের সন্ত্রাস এখনও খুব ভাল মনে আছে আশরফ হায়দরির। শরিয়তি আইনের নির্মম প্রয়োগ তখন দেখেছিল আফগানিস্তান। হায়দরি তখন ছোট ছিলেন, এখন বড় হয়েছেন। ফের সেই তালিবানের দিন ফিরেছে, এবার আবার তাঁদের হয়ে কাজ করতে হবে হায়দরিকে!
সোমবার প্রথম নতুন অফিসে যান তিনি। তবে বাড়িতে জানাননি সে কথা। হায়দরি একা নন, এমনই আরও সরকারি কর্মীর কাছে তালিবানের ফোন গেছে। সবাইকেই একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজে ফিরতে হবে। অনেক কিছু আটকে রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকেরই রেভিনিউ বিভাগের কর্মী সোহরাব সিকান্দর। তিনি ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছেন কাজে, নতুন তালিবান সরকারের অধীনে। জানালেন, তাঁর যে মহিলা সহকর্মীরা ছিলেন, তাঁদের কাউকে তিনি দেখেননি আর।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন বলবৎ ছিল, তখন মেয়েদের কাজ করার অনুমতি বা অধিকার ছিল না। তাঁদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ছিল। ঘরের বাইরে বেরোলে কোনও পুরুষ আত্মীয়র সঙ্গেই বেরোতে হতো।
যদিও তালিবান দাবি করেছে, এবারে তারা মহিলাদের কাজ করতে দেবে। কিন্তু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি এমনটা মোটেও ঘটছে না। ঘরে-ঘরে শোনা যাচ্ছে, মেয়েদের কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংখ্যালঘুরাও এইধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ জানিয়েছেন, এবার দেশের জন্য কাজ শুরু করার সময় হয়েছে। তাঁর দাবি, এখন নিরাপত্তার খাতিরে মেয়েদের কাজে ফেরানো হচ্ছে না, কিন্তু কত দ্রুত তা করা যায়, সেটাও দেখছে তালিবান।
সূত্রের খবর, তালিবান সরকার এখনও পুরোপুরি গড়া হয়নি। কয়েকটি মন্ত্রক নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে কেবল। অর্থ মন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কয়েক জন আধিকারিককেই ডেকে পাঠানো হয়েছে আপাতত। এর পরে আফগানিস্তানে স্থায়ী সরকার গঠনে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গেও ক্রমাগত আলোচনা চালাচ্ছে তালিবান নেতারা। ইতিমধ্যেই শিক্ষা এবং অর্থমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে তারা। কাবুলের মেয়র, গভর্নরের নামও ঘোষণা করে দিয়েছে তালিবানরা। সমস্ত শীর্ষপদেই রয়েছে তালিবান নেতারা।