শেষ আপডেট: 30th September 2023 18:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রচলিত একটি লোকসঙ্গীত ইদানীং শান থেকে শুরু করে অনেকেই রেকর্ড করেছেন। সেই গানটির কথা এরকম—‘তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলেম আর পেলেম না/দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা’!
বকেয়া টাকাকড়ির হিসাব নিয়ে দিল্লি-কলকাতা যখন প্রবল সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে, তখন বর্ষা-দিনে এই গানের কথাই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। গিরিরাজ সিংকে ধরতে চাইছে তৃণমূল, অথচ মোদীর এই মনের মানুষকে এবারও পেলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কে এই গিরিরাজ সিং?
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হলেন গিরিরাজ। তবে তাঁর সেই প্রশাসনিক পরিচয়ের থেকেও বড় হল জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। বিজেপির এই নেতা চরম মুসলিম বিদ্বেষী বলে বহু মানুষের অভিযোগ। কী মাত্রায় তিনি মুসলিম বিদ্বেষী তা বোঝাতে তাঁর কথারই উদাহরণ দেন বিরোধীরা। যেমন গিরিরাজের পছন্দের কথা হল, “দেশভাগের সময়ে সমস্ত মুসলমানকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা করতে পারলে বেগুসরাইতে শিবলিঙ্গ ভাঙা হত না, রামনবমী ও হনুমানজয়ন্তীর দিন বিহার শরিফে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও হত না”। এ কথা আগে বহুবার বলেছেন গিরিরাজ। শনিবারও পটনায় বসে ফের সে কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।
এমনকি শনিবার গিরিরাজ এও বলেছেন, “যেখানে যেখানে জনসংখ্যা বেড়েছে সেখানেই হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ধমকানো, চমকানো চলছে”। আবার নীতীশ কুমারকে খোঁচা দিয়ে গিরিরাজ বলেছেন, “নীতীশ হজ করতে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি নেই।”
গিরিরাজের জন্ম বিহারে লক্ষ্ণীসরাইয়ে। আগে রাজ্যে জেডিইউ-বিজেপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তার অবশ্য অনেক আগে থেকে মোদীর ফ্যান তিনি। তার পর বিহারে বিজেপির জোট সরকারের পতন ঘটতে তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
দ্য ওয়াল এখন হোয়াটসঅ্যাপেও। ফলো করতে ক্লিক করুন।
ব্যক্তি গিরিরাজের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কথাবার্তা নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু নতুন সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বকেয়া টাকাকড়ির বিষয়টি। একশ দিনের কাজ, আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে ১৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে বাংলার। এ ব্যাপারে বাংলার নেতারা যতবারই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন, ততবারই ব্যর্থ হয়েছেন।
একুশ সালে বাংলায় ফের সরকার গঠনের পর প্রদীপ মজুমদারকে পঞ্চায়েত মন্ত্রী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদীপবাবু দায়িত্ব পেয়েই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান। কিন্তু রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের অভিযোগ, কখনও শরীর খারাপ, কখনও বা অন্য অজুহাতে সাক্ষাৎ এড়িয়ে গিয়েছেন গিরিরাজ। বাংলার পঞ্চায়েত মন্ত্রী সময় চাইলে তাঁকে গিরিরাজের দফতর জানায়, উনি হরিদ্বারে রয়েছেন। সামনের সপ্তাহে ফোন করুন। পরে সপ্তাহে ফোন করলে বলা হয়, ওনার শরীর ভাল নেই। তার পরের সপ্তাহে আবার জানানো হয় উনি দিল্লিতে নেই, পাটনায় রয়েছেন।
শুধু প্রদীপ মজুমদার নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের নেতারা তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করতে নয়াদিল্লির কৃষিভবনে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আপ্ত সহায়ক জানিয়ে দেন, মন্ত্রী পাটনায় রয়েছেন। অথচ গিরিরাজ সেদিন দিল্লিতেই ছিলেন পরে জানতে পারেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
এবার একশ দিনের বকেয়া পাওনার দাবি নিয়ে ৩ অক্টোবর দিল্লিতে গিরিরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ইমেল করে জানিয়ে দিয়েছে, ওই দিন মন্ত্রী পাটনায় থাকবেন।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বে এর আগে যাঁরা ছিলেন তাঁদের আচরণ কখনওই এরকম ছিল না। এই মন্ত্রকের অনুদান নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বারবার কেন্দ্রের সংঘাত হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী বা সাংসদদের সঙ্গে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী দেখা অন্তত করতেন। ইউপিএ জমানার দুই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী এ ব্যাপারে ছিলেন অনন্য। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সৎ ও নিষ্ঠাবান বলে পরিচিত আরজেডি নেতা রঘুবংশ প্রসাদ সিং। অন্যজন হলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ধারণাই এখন বিপন্ন। এমন নয় যে অতীতে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ উঠত না। রাজনৈতিক কারণে তা বারবারই উঠত। কিন্তু তখনও সহযোগিতা ও সমন্বয়ের যে বাতাবরণ ছিল, ইদানীং তা একেবারেই অনুপস্থিত।