শেষ আপডেট: 25th January 2025 23:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উত্তর ২৪ পরগনার মাসলন্দপুরের বিদ্যানপল্লির বাসিন্দা ৫৭ বছরের গোকুলচন্দ্র দাস, যিনি ঢাককে শুধু পুজোর মণ্ডপের সীমানায় আটকে রাখেননি, বরং এই বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রটিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে জায়গা করে দিয়েছেন। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ জাকির হুসেন, এবং তন্ময় বসুর মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে গোকুলচন্দ্র দাস ঢাকের অভিনবতাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। এ বার এই অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে সম্মানিত করা হচ্ছে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, পদ্মশ্রীতে।
গোকুলচন্দ্র দাসের পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঢাক বাজিয়ে এসেছে। কিন্তু তিনি এই ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রটিকে নতুন পরিচিতি দেওয়ার কাজ শুরু করেন। ঢাককে পুজো এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গণ্ডি থেকে বের করে আনার উদ্দেশ্যে তিনি অভিনব ধাঁচে ঢাক বাজানোর কৌশল রপ্ত করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাক আজ মূলধারার সংগীতের একটি প্রাসঙ্গিক অংশ হয়ে উঠেছে।
২০০৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত হলিউড বোল-এ ইতিহাস সৃষ্টি করেন গোকুলচন্দ্র দাস। তিনি প্রথম ঢাকি হিসেবে সেই মঞ্চে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গীতমণ্ডলীতে পারফর্ম করেন। এ ছাড়া সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগো, বার্লিনের মতো শহরে ঢাক বাজিয়ে তিনি ঢাকের শিল্পমাধুর্য বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।
তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রাপথে সামাজিক বাধা-নিষেধকে বারবার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন গোকুলচন্দ্র। পুরুষশাসিত সমাজের সীমানা ভেঙে তিনি প্রায় ১৫০ জন মহিলাকে ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি মহিলাদের জন্য বিশেষ ধরনের হালকা ঢাক তৈরি করেছেন, যা প্রথাগত ঢাকের তুলনায় প্রায় দেড় কেজি হালকা।
গোকুলচন্দ্রের মতে, ঢাককে যদি মূলধারার বাদ্যযন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে তার নিজস্ব ভাষা ও শৃঙ্খলা তৈরি করতে হবে। শিল্পী হিসাবে তিনি বিশ্বাস করেন, সঠিক অধ্যবসায় এবং সংগীতের শাস্ত্রীয় প্রশিক্ষণই একজন শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গিকে পূর্ণতা দেয়।
গোকুলচন্দ্র দাসের কৃতিত্ব শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ঢাকশিল্পীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ করে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর সেই প্রয়াসকেই সম্মান জানাল সরকার।