ঢাকির দান করা সেই অর্থ।
শেষ আপডেট: 17th October 2024 12:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০৮ টাকা! অর্থের হিসেবে হয়তো কিছুই নয়, কিন্তু যিনি এই অর্থ দান করেছেন, তিনি একজন ঢাকি। মণ্ডপে পুজোর চারদিন ঢাক বাজানো বাবদ রোজগারের একাংশ টাকা বাড়ি ফেরার আগে জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে দান করেছেন তিনি।
প্লাস্টিকে মোড়া ১০০ টাকার নোট ও খুচরো কয়েনের সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আপ্লুত কিঞ্জল নন্দ লিখেছেন, 'আমি জানি, আপনার মতো মানুষকে প্রণাম করার যোগ্যও আমি নই, তবুও প্রণাম আপনাকে, শক্তি দিন, ঠিক এইরকম নির্লোভ জীবন গড়ে তোলার।'
এবারে মহালয়ার দিন থেকেই উৎসবে ফিরতে দেখা গিয়েছিল আমজনতাকে। প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া- সময় যত গড়িয়েছে উত্তরোত্তর ভিড়ও যেন ততই বেড়েছে।
অন্যদিকে ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই অনশন এখনও চলছে। মানুষ উৎসবে ফিরে যাওয়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে নানা মহল থেকে নানাবিধ প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল। তবে সপ্তমী থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। নবমীর রাতে ধর্মতলায় ডাক্তারদের অনশন মঞ্চের কাছে দেখা গিয়েছিল শুধুই কালো মাথার ভিড়।
গত মঙ্গলবার রাজ্যের কার্নিভালের প্রতিবাদে ডাক্তারদের দ্রোহের কার্নিভালেও মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্যও চেয়েছিলেন তাঁরা। এবার সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এলেন এক সহৃদয় ঢাকি। যিনি নিজের পথ খরচ বাঁচিয়ে ডাক্তারদের হাতে ২০৮ টাকা তুলে দিলেও নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
অনুপ ঘোষাল নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে ওই টাকার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ' সম্ভবত আড্ডা থেকেই ফিরছিলাম। ও আমায় দেখে, দাদা একটু শুনবা বলে রাস্তার পাশে ডেকে নিল। মুখে হাসি। ঢাকটা থাকল কাঁধেই। বুক পকেট থেকে ছবির এই জিনিসটা বের করে আমার হাতে দিল। বললাম, টাকা কেন? কী হবে? পথ খরচি ভাগে তিনশ আঠারো পাইছি। অতো লাগবি নি। একশো দশ হলিই হবে। বাকিটা এর মধ্যি আছে, ডাক্তারবাবুদের হাতে দিতি পারবেন? জানি এ কিছু না, তবু ...'
অনুপ আরও লিখেছেন, 'হ্যাঁ,প্লিজ কেউ ওঁর নাম,ঠিকানা জানতে চাইবেন না, ওঁকে কথা দিয়েছি আমি। চাইছি ওঁর ওই স্পর্শটা ডাক্তারবাবুরা অনুভব করুক। ওটা যতবার ছুঁয়েছি ততবার এই আকালেও নিজেকে বলেছি, প্রাণ আছে এখনও প্রাণ আছে!' অনুপের ওই পোস্টই রি-পোস্ট করেছেন কিঞ্জল। এভাবে দূর দুরান্তের মানুষও পাশে থাকার বার্তা দেওয়ায় আপ্লুত আন্দোলনকারীরা।
অন্যদিকে এবার আমরণ অনশনের পাশাপাশি ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ কর্মসূচিতে নামতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বুধবার ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে বৈঠকে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মাঝ রাতের সেই বৈঠক থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ কর্মসূচির ঘোষণা হবে বলে খবর। জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি নিয়ে নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন সাধারণ জনতা। অর্থাৎ গত ৯ অগস্ট থেকে লাগাতার চালিয়ে যাওয়া আন্দোলনকে জনতা কী চোখে দেখছেন, সেটাও আরও ভাল করে পরখ করতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই সূত্রে মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড় যোগসূত্রও গড়ে তুলতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা।