শেষ আপডেট: 5th October 2022 17:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিসর্জনের পরই বোধন। দর্পণে মহামায়ার নিরঞ্জন সেরেই আবার দেবীর ঘটপ্রতিষ্ঠা। শুনতে খানিক অবাক লাগলেও দুর্গা পূজার এটাই সাবেক নিয়ম। এই নিয়মেই নিরঞ্জনের পরেও নতুন রূপে পূজিতা হন দশভুজা। দেবী দুর্গা সকল বীরের আরাধ্যা দেবী। তাই তাঁর আরেক নাম অপরাজিতা। 'দ্বিষোজহি' বা শত্রুনাশের বাসনা নিয়ে দশমীর শেষবেলায় তাই পুজো করা হয় দেবী অপরাজিতার (Devi Aparajita)।
দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পর বিজয় লাভের সঙ্কল্পে শুরু হয় দেবী অপরাজিতা পুজো। দেবীর গায়ের রং অপরাজিতা ফুলের মতো নীল। তিনি কখনও চতুর্ভুজা, কখনও অষ্টভুজা। হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম,ত্রিশূল, ধনুর্বাণ, বর ও অভয়মুদ্রা। এই দেবী ত্রিনয়না ও অপার সুন্দরী। তাঁর মাথার মুকুটে লেগে থাকে চন্দ্রকলা। এই পূজার মূল উপকরণই হল নীল অপরাজিতা (Devi Aparajita)। এই ফুলের মালা পরানো হয় মায়ের গলায়।
শোনা যায়, আগেকার দিনে নবরাত্রির পর রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। যুদ্ধের জন্য দেবীপক্ষের দশম দিন বা বিজয়া দশমীকেই বেছে নিতেন রাজারা। তার অবশ্য কিছু কারণও ছিল। প্রথমত, চাণক্য বা কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ অনুযায়ী এই সময়টাই যুদ্ধযাত্রার শ্রেষ্ঠ সময়। পণ্ডিত রঘুনন্দন তাঁর ‘তিথিতত্ত্ব’ গ্রন্থেও একই কথা বলেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজা যদি দশমীর পর যুদ্ধের ইচ্ছে নিয়ে কোথাও যাত্রা করেন, তাহলে তার জয় হয় না। তাই যুদ্ধে অপরাজেয় থাকতে দশমীর দিনটাকেই যুদ্ধযাত্রার প্রশস্ত সময় হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন রাজারা। শত্রুনাশ করে বিজয়লক্ষীকে বরণের প্রত্যাশা নিয়েই করা হত অপরাজিতা পুজো। কথিত আছে, লঙ্কায় যুদ্ধ জয়ের জন্য দশমী তিথিতে দেবী অপরাজিতার পূজো প্রচলন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র। দেবী অপরাজিতার (Devi Aparajita) আশীর্বাদে এই দশমী বা দশেরা তিথিতেই রাবণবধ করেন রাম।
সাদা অপরাজিতা গাছকে দুর্গাজ্ঞানে পুজো করা হয় এদিন। গাছটিকে দেবীরূপে কল্পনা করে পুজো করা হয় ফুল, বেলপাতা দিয়ে। আধুনিক নগর সভ্যতায় এই পুজোর চল না থাকলেও গ্রামীণ এলাকায় আজও নিষ্ঠাভরে পূজিতা হন দেবী অপরাজিতা। প্রাচীন বনেদি বাড়িগুলোতেও দুর্গাপুজোর পর এই পুজোর চল রয়েছে। পুজোশেষে কোথাও কোথাও ভক্তদের হাতে সেই অপরাজিতার গাছের ডাল বেঁধে দেওয়া হয় দেবীর বিজয়ের প্রতীক হিসাবে।