শেষ আপডেট: 28th September 2024 21:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডের অনেকেই বলেন, সলমন খান রগচটা ধরনের। তাঁর বাবা সেলিম খানেরও যে এতটাই মাথা গরম ছিল কে জানত! এমনকি বলিউডের অন্যতম সফল এই প্রযোজক ও চিত্র নাট্যকার সেলিম আবদুল রশিদ খান নাকি ঋষি কাপুরকেও সরাসরি হুমকি দিয়েছিলেন। রাগের কারণ শুধু এ টুকুই যে সেলিম-জাভেদের লেখা ছবিতে কাজ করতে চাননি নবাগত ঋষি কাপুর। বলিউডে কাপুর পরিবারের প্রতিপত্তি সত্ত্বেও ঋষিকে চমকে ছিলেন সেলিম।
মারা যাওয়ার আগে ঋষি কাপুর তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ করেছেন। তার নাম ‘খুল্লাম খুল্লাহ’। হিন্দি সিনেমায় তাঁর হাতেখড়ি, বলিউডের অভিনেতা, অভিনেত্রী, প্রযোজক, পরিচালকদের সঙ্গে তাঁর পারস্পরিক সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতার কথা তাতে লিখেছেন ঋষি। সেলিমের প্রসঙ্গে যে সময়ের কথা তিনি বলছেন, ততদিনে ‘ববি’ মুক্তি পেয়ে গেছে। ডিম্পল ও ঋষির উদ্দাম রসয়ানে বক্স অফিসে ঝড় উঠেছে।
অনেকে বলেন, ববি সুপারহিট হওয়ায় কিছুটা গাত্রদাহ হয়েছিল জাভেদ আখতারের। তখন বলিউডে চিত্র নাট্যকার হিসাবে সেলিম-জাভেদ জুটিও একের পর এক হিট ছবি দিয়েছেন।
খুল্লাম খুল্লায় ঋষি কাপুর লিখেছেন, সেলিম-জাভেদ তাঁদের ছবি ত্রিশূলে অভিনয় করতে বলেছিলেন তাঁকে। কিন্তু তাঁর স্ক্রিপ্ট ভাল লাগেনি। তাই অফার ফিরিয়ে দেন। এতেই তেলেবেগুনে রেগে যান সেলিম-জাভেদ জুটি। তাদের প্রতিহিংসা ফুটে বেরোতে থাকে। ঋষির কথায়, “একদিন হোটেলে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় সেলিম সাহাবের সঙ্গে। আমি স্নুকার খেলছিলাম। সেলিম খান আমাকে দেখে এগিয়ে আসেন। তার পর বলেন, তোমার সাহস তো মন্দ নয় যে তুমি সেলিম-জাভেদের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছ!”
ঋষি কাপুর লিখেছেন, তিনিও দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। বয়সও তখন কম। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। ঋষি পাল্টা বলেন, আপনাদের স্ক্রিপ্ট ভাল লাগেনি। তাই ছবিটা করব না বলেছি।
কিন্তু সেলিমও তেমনই। ঋষির কথায়, “সেলিম খান বলেন, তুমি কি জানো আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের ছবির প্রস্তাব ফেরায়নি। আমরা তোমার কেরিয়ার শেষ করে দিতে পারি।”
ঋষি লিখেছেন, “এমনকি সেলিম সাহাব এও বলেন, জঞ্জির ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম রাজেশ খান্নাকে। রাজেশ রাজি হয়নি। আমরা নতুন হিরো তৈরি করেছি অমিতাভ বচ্চন। যে রাজেশ খান্নাকে শেষ করে দিয়েছে। তোমার সঙ্গেও তেমনই করব”।
ঋষি কাপুর রাজি না হওয়ায় শেষমেশ ত্রিশূল ছবিতে শশী কাপুরকে নেওয়া হয়। ছবিতে তিন জন বড় অভিনেতা ছিলেন। অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীব কুমার ও শশী কাপুর। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ত্রিশূল’। ওই একই বছরে মুক্তি পেয়েছিল অমিতাভ ও রেখার অভিনীত ছবি ‘মুকাদ্দর কি সিকান্দর’। বক্স অফিসে পয়লা নম্বরে ছিল মুকাদ্দর কি সিকান্দর, দু’নম্বরে ত্রিশূল।
ত্রিশূল ছবিতে ৭টি গান ছিল। তার মধ্যে বেশি হিট করেছিল তিনটি গান। লতা মঙ্গেশকর, নিতিন মুকেশের গাওয়া ‘গাপুচি গাপুচি গাম গাম’, লতা মঙ্গেশকর-কিশোর কুমার যীশুদাসের গাওয়া ‘মহব্বত বড়ে কাম কি চিজ হ্যায়’ এবং লতা মঙ্গেশকর ও কিশোর কুমারের গাওয়া ‘জানেমন তুম কামাল করতে হো’।
এক বছরে অমিতাভের দুটো হিট ছবি, তখন তাঁকে আর দেখে কে! সেলিম-জাভেদেরও বাজার তখন বেশ চড়া। সম্প্রতি প্রাইম ভিডিও ডকুমেন্টারিতে “অ্যাংরি ইয়ং ম্যান” নামে একটা সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। সেখানেও সেলিম-জাভেদ জুটির সাফল্যের কথা রয়েছে। সাতের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত একটার পর একটা হিট ছবি দেন এই দুই জুটি। পরে সেই জুটি অবশ্য ভেঙে যায়।
তবে জাভেদ আখতার কখনও সেলিমের মতো দাবি করেননি যে তাঁরা অমিতাভকে তৈরি করেছিলেন। বরং এক সাক্ষাৎকারে জাভেদ আখতার বলেন, আমরা এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে অমিতাভ বচ্চন একজন বড় অভিনেতা। তাঁর মেধাকে আমরা পুঁজি করেছিলাম, অমিতাভ তাঁর অভিনয় ও পারফরমেন্স দিয়ে আমাদের ভরিয়ে দেন।