শেষ আপডেট: 29th September 2024 21:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিন দিন আগেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে, মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নাম করে টাকা তুলছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ী ও প্রোমোটারকে অভিষেকের নাম নিয়ে কালীচরণ প্রচ্ছন্ন হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সূত্রের খবর, ৭২ ঘণ্টা পরেও সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যত কিছুই এগোয়নি।
অভিষেকের অফিসের তরফে এ ব্যাপারে শেক্সপিয়ার সরণী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে পুলিশ কালীচরণকে আদৌ জেরা করেছে কিনা বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে কিনা তা জানতে রবিবার দুপুরে শেক্সপিয়ার সরণী থানার ওসিকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু ওসি ফোন ধরেননি বা টেক্স মেসেজের উত্তর দেননি। আবার ডিসি সাউথ প্রিয়ব্রত রায় এ বিষয়ে বলেন, 'এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবে না।' তবে কলকাতা পুলিশের এক সিনিয়র আইপিএস অফিসার জানিয়েছেন, তদন্ত সেরকম এগোয়নি বললেই চলে। ‘ইন্টারনাল এনকোয়ারি’ করা হয়েছে মাত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ছাড়াও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি অভিযোগ দায়ের করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেও পুলিশি তদন্ত না এগোনোয় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের মধ্যেও। রাজ্যের শাসক দলের দ্বিতীয় শক্তিধর নেতা অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই তাঁর অবস্থান। অনেকের মতে, অভিষেকের অভিযোগের পরেও যদি তদন্ত বিশেষ না এগোয়, তাহলে কোনও ব্যবসায়ী বা প্রমোটার অভিযোগ করলে আদৌ কি সাড়া পেতেন? সাধারণ মানুষের কাছেই বা এর কী বার্তা যাচ্ছে?
এ ব্যাপারে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে হাতেগরম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁকে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনিক তদন্ত দু'টিই শুরু হওয়া উচিত ছিল।' জহর সরকার আরও বলেন, 'পুলিশ নিশ্চয়ই কারও নির্দেশের অপেক্ষা করছে। তবে মনে রাখতে হবে পুলিশ ও প্রশাসনের উপর যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা ফেরাতে এটাই সুযোগ। এ সব অভিযোগের পর দ্রুত পদক্ষেপ করলে তবেই মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে।'
তাঁর ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের কথা শুনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার বলেছিলেন, 'থানায় না গিয়ে আমাকে জানাতে পারত, আমি বিভাগীয় তদন্ত করে দেখতাম।' মেয়র এও দাবি করেছিলেন, অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। সুতরাং কালীচরণকে সরানোর প্রশ্ন নেই। শুক্রবার কালীচরণ অন্যান্য দিনের মতোই পুরসভায় এসেছিলেন।
ফিরহাদ হাকিমের এ কথা শুনে সাধারণের মধ্যে এমনকি তৃণমূলের ভিতরেও দুটি মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে। এক, তাঁর ওএসডির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ উঠেছে। সুতরাং থানায় যাবে না কেন? ফৌজদারি অভিযোগের তদন্তের এক্তিয়ার কি পুরসভার রয়েছে? দুই, মেয়র নিজেই যখন বলছেন, অভিযোগের ভিত্তি নেই, তখন তাঁর কাছে গিয়ে আদৌ কোনও সুরাহা পাওয়া যেত কি?
তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, মেয়র ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ এটা চাউর করে দিতে চাইছেন, যে যেহেতু অভিষেক ফিরহাদ হাকিমকে পছন্দ করেন না, তাই এমনটা করেছেন। কিন্তু এটা কোনও যুক্তিই নয়। এ কথা বলে অভিযোগকে লঘুতর করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। প্রশ্ন হল, কালীচরণের বিরুদ্ধে লাগাতার এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে কি অভিষেকের মতো রাজনৈতিক উচ্চস্থানে থাকা কোনও নেতা থানায় অভিযোগ করতেন?
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'যেখান থেকে অভিযোগ উঠেছে, সেই অফিসের মর্যাদা ও উচ্চতা রয়েছে। আবার যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর পদেরও গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং এ ব্যাপারে পুলিশ ও পুরসভা নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখবে। এর বাইরে আর কোনও মন্তব্য করব না।'