শেষ আপডেট: 3rd February 2025 16:12
বাগদেবীর আরাধনায় শেষটুকু ধরা থাকে দধিকর্মার আন্তরিক আয়োজনে। সে গৃহস্থবাড়ির একান্ত পরিসরই হোক বা স্কুল-কলেজের বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গন, এই প্রথায় হেরফের হয় না কোথাও। সরস্বতী পুজোর পরের সকালটুকু তোলা থাকে এই দধিকর্মার জন্য। এটাই বাঙালির রীতি।
তিনি বিদ্যার দেবী। হিন্দুদের মানসপটে দেবী দুর্গার মতোই তাঁর জমকালো উপস্থিতি। ঋকবেদের এই দেবীকে নিয়ে পুরাণকথায় কত গল্প। কখনও তিনি ব্রক্ষ্মার কন্যা। তাঁর মুখগহ্বর থেকে নিঃসৃতা। কখনও তিনি ব্রহ্মার স্ত্রী। ব্রহ্মাই প্রথম তাঁর স্ত্রী সরস্বতীর পুজো করেন। তারপরে মর্ত্যবাসী স্তুতি করেন বাগদেবীর।
বসন্ত পঞ্চমীতে বাগদেবীর আরাধনার পর রীতি মেনে পরের সকালে হয় দধিকর্মা। পুরাণ বিশেষজ্ঞ ডঃ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির কথায়, "সরস্বতী শ্বেতশুভ্রা। দই আর খইও শুভ্র। আর দুইই মঙ্গলের চিহ্ন। লাজ অর্থাৎ খই। যা মঙ্গলের প্রতীক হিসেবেই চিহ্নিত। বিয়ের সময় লাজ অর্থাৎ খই ছড়ানো হয় মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে। হিন্দু শাস্ত্রে কোনও দেবদেবীই বারোয়ারি নন, মঙ্গলের জন্য গৃহস্থবাড়িতে তাঁদের আরাধনা শুরু। সরস্বতীও এর ব্যতিক্রম নন। পরবর্তীকে বিদ্যাঙ্গনে শুরু হয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি-বিদ্যারদেবীর আরাধনা। আর মঙ্গলের অবশেষটুকু ধরে রাখতেই সরস্বতী পুজোর পরের দিন দধিকর্মার আয়োজন। এ যেন মঙ্গলের অবশেষের সঙ্গে বিদ্যার রেশটুকুও ধরে রাখার প্রয়াস।"
নৃসিংহপ্রসাদবাবু মনে করেন, হিন্দু রীতিতে যে কোনও উৎসবের আদি-মধ্য ও অন্তে ধরা থাকে মঙ্গলাচরণ। দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে শেষের মঙ্গলাচরণ ধরা থাকে দর্পণে। তেমনি সরস্বতীপুজোয় দধিকর্মায়। অর্থাৎ উৎসব শেষ হল। কিন্তু মঙ্গল ধরা থাক মানুষের পরবর্তী আচার আচরণে। কর্মে। যা শেষ হল তার নির্যাস অর্থাৎ ফল-ফলারি-সন্দেশ মঙ্গলের প্রতীক দই-খইয়ে যোগ করে মঙ্গলের পথে যাত্রাশুরু।
তাই তো সরস্বতী পুজোর দিন পুজো যেন শেষ হয়েও শেষ হয় না। পরের দিন সকালে নতুন করে পুরোহিতের মন্ত্রোচারণ শোনা যায় পুজো প্রাঙ্গনে। গৃহস্থের ঘরে বেলপাতায় মা সরস্বতী লেখে পড়ুয়ারা। এরপর দেবীর কাছে দিয়ে রাখা বইপত্র- বাদ্যযন্ত্র-শখের গানের খাতাটি আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার পালা। ঘট বিসর্জনের পর মা-কাকিমারা ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দধিকর্মা মাখতে। সরস্বতীর সেই প্রসাদ যে দারুণ উপাদেয়। স্কুল-কলেজেও পুজোর ইতি এই দধিকর্মায়। এখন তো বারোয়ারি মণ্ডপেও সরস্বতীর আরাধনা। বিশাল গামলায় মাখা দধিকর্মা খাওয়ার অপেক্ষা থাকে সেখানেও। আসলে সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যে দধিকর্মা জড়িয়ে গেছে কবেই। নৃসিংহপ্রসাদবাবু বলেন, "শাস্ত্রীয় কোনও নিয়ম নেই। বরং একটা বিশ্বাস আর শুভ ভাবনাই এগিয়ে নিয়ে চলেছে সরস্বতী পুজোর পরের সকালে দধিকর্মার প্রথাকে।"