শেষ আপডেট: 27th October 2022 06:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেরলের রাজ্যপাল (Kerala governor) আরিফ মহম্মদ খানের বিরুদ্ধে মাঠে-ময়দানে লড়াইয়ের পাশাপাশি আইন-আদালতেও (court) যাওয়ার কথা ভাবছে রাজ্যের শাসক দল সিপিএম (CPM) এবং ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক সরকার (Left government)। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছে, রাজ্যপাল খান যেভাবে মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার মতো নজিরবিহীন দাবি তুলেছেন, তাতে স্পষ্ট, তাঁর পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের মদত আছে। নিছকই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে তিনি লড়াই করছেন না।
প্রতিটি পদক্ষেপের আগে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজ্ঞদের মতামত নিচ্ছেন। যদিও নিয়ম অনুসারের রাজ্য সরকারের আইনজ্ঞদের সঙ্গেই আইনি এবং সাংবিধানিক বিষয়ে তাঁর আলোচনা এবং মতামত নেওয়ার কথা। কিন্তু চলতি বিতর্কে রাজ্যপাল খান রাজ্য সরকারের আইনজীবী এবং তাঁর আইনি পরামর্শদাতার সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করছেন না। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা আইনি লড়াইও জরুরি, মনে করছে বাম নেতৃত্ব।
রাজ্যপাল খানের সঙ্গে হালের বিরোধের মূলে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে আচার্যের ক্ষমতা ছাঁটাই নিয়ে বিবাদ। সিপিএম সরকারের বক্তব্য, অর্ধেক বেশি রাজ্য ইতিমধ্যে উপাচার্য বাছাইয়ের ক্ষমতা সরকারের হাতে নিয়ে নিয়েছে। এমনকী, গুজরাতে স্বাধীনতার পর থেকেই ওই ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের ভূমিকা আলঙ্কারিক। রাজ্যপালের হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। হালে তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্টেও একই ধরনের আইন করা হয়েছে। কিন্তু রাজভবন আপত্তি তুলেছে শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে। যদিও বাংলার আগের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের মতো এখনও কঠোর অবস্থান নেননি বর্তমান রাজ্যপাল লা গণেশন। রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে সৌহার্দ্যের বাতাস বইছে।
কেরল সরকারের আইনজ্ঞদের অভিমত, রাজ্যপালের ব্যক্তিগত অসন্তোষ বা সন্তুষ্টির কোনও মান্যতা সংবিধানে নেই। কোনটি সন্তুষ্টি আর কোনটি নয়, সংবিধানেই তার ব্যাখ্যা আছে। রাজ্যপাল ব্যক্তিগতভাবে কোনও মানদণ্ড ঠিক করতে পারেন না। কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এমভি গোবিন্দনের কথায়, মন্ত্রীদের উপর আস্থা-অনাস্থার বিষয়টি পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রীর উপর বিবেচনার বিষয়। রাজ্যপাল নিজেও এই ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে চাইছেন। আমরা আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা চালাচ্ছি। প্রয়োজনে আদালতেও মোকাবিলা করা হবে রাজ্যপালের। আদালতে যেতে পারে রাজ্য সরকারও, আভাস দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে বিতর্কের জেরে সমালোচনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান মন্ত্রীদের বরখাস্ত করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে এই কারণে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে চিঠি লেখেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন জবাবি চিঠিতে।
সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্যপাল আরিফকে সামনে রেখে বিজেপি ও আরএসএস আসলে নতুন এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইছে। উচ্চশিক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের দখলদারি নিশ্চিত করতে রাজ্যপালকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। নতুন কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির অংশ হিসাবেই কেরলকে পরীক্ষাগার হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ, সেখানেই একমাত্র বাম সরকার ক্ষমতায়, যারা অতীতে রাজ্যপালের ভূমিকার বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই চালিয়েছে।