শেষ আপডেট: 16th December 2024 18:26
সুমন বটব্যাল
এক মহিলা সাংবাদিকের আনা হেনস্থার অভিযোগে সম্প্রতি সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করেছিল সিপিএম। গত শুক্রবার সেই সাসপেনশন প্রত্যাহারও করে নিয়েছে দল। তবে একই সঙ্গে এ ঘটনা থেকে 'শিক্ষা' নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের 'আচরণ' সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি এ ব্যাপারে আলিমুদ্দিনে ডেকে তন্ময়কে সতর্কও করেছেন খোদ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। একইভাবে জেলায় জেলায় গিয়েছে পার্টি 'নোট'। যাতে বলা হয়েছে, 'আপনি কারও সঙ্গে যেটিকে ক্যাজুয়াল বা ফ্রেন্ডলি আচরণ হিসেবে মনে করছেন, উল্টো দিকে থাকা মানুষটি সেটিকে একইরকম নাও ভাবতে পারে। তাই নিজের এবং দলের স্বার্থে সকলকে আচরণে সংযত হতে হবে।'
দলের বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, "তন্ময়ের ঘটনা আমাদের মধ্যেও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল। তারপর থেকে কমবেশি সকলেই সতর্ক রয়েছেন। দলের তরফেও সতর্ক করা হয়েছে।"
রাজ্য সম্পাদকের সতর্ক করার বিষয়টি মেনে নিয়ে তন্ময়বাবুও বলেন, "হ্যাঁ, এটা সত্যি আমার দুর্বলতা। সকলের সঙ্গে খুব ফ্রেন্ডলি বা ক্যাজুয়ালি মিশতাম! রাজ্য সম্পাদকও সর্তক করেছেন। ওই ঘটনার পর আমি নিজেও এবিষয়ে সাবধান হয়েছি।"
গত ২৭ অক্টোবর ফেসবুক লাইভে এক মহিলা সাংবাদিক সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তন্ময় ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। ফেসবুক লাইভে ওই মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেন, 'চার বছর সাংবাদিকতা করছি কিন্তু এত খারাপ অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয়নি। আসলে পোটেনশিয়াল রেপিস্ট এরাই। এদের চিনে রাখা দরকার।'
ঘটনার প্রায় পরে পরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সিপিএম তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ডও করে। গত শুক্রবার সেই সাসপেনশন প্রত্যাহার হতেই দলের অন্দরেই একাংশ নেতা, কর্মী প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, স্রেফ অভিযোগের ভিত্তিতে এভাবে তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার বিষয়টি সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএমের তরফে জানানো হলেও দলে ফেরানোর বিষয়ে কোনও সাংবাদিক বৈঠক করা হয়নি। সবটাই হয়েছে 'চুপিচুপি'। যা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন দলের নীচুতলার একাংশ।
তবে এ ব্যাপারে তন্ময়ের সাবধানী প্রতিক্রিয়া, "দলের আগের সিদ্ধান্তও মেনে নিয়েছিলাম। এবারও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। তবে কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠল তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ইউনিটে সেই প্রশ্ন করতে পারেন। প্রয়োজনে তাঁরা ইউনিটের মাধ্যমে জেলা নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্বর কাছে সেই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন। এটা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্য়ন্তরের গণতন্ত্র। এটা রক্ষিত হলেই ভাল।"
প্রসঙ্গত, ওই ঘটনার পরই তন্ময়বাবু নিজের বসার ঘরে যেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন, সেখানে সিসিটিভি লাগিয়েছেন। তন্ময়বাবুর কথায়, "৪৭ বছর সক্রিয়ভাবে পার্টি করছি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। সতর্ক তো হতেই হবে।"