আরজি কর কি ভোট ফেরাতে পারবে?
শেষ আপডেট: 18th October 2024 18:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকসভা ভোটে তৃণমূল যে সাফল্য পেয়েছে তার পর নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোতেই পারত কালীঘাট। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটিয়েছে ‘আরজি কর’। শহর দখল করে লক্ষ মানুষের প্রতিবাদ এমনভাবে আছড়ে পড়েছে, যা দেখে অনেকে ঠাওর করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত অসন্তোষও এর সঙ্গে মিশে গেছে। আর এরই মধ্যে এসে পড়েছে রাজ্যের ৬টি বিধানসভার উপ নির্বাচন।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, আরজি কর পর্ব কি সিপিএম তথা বামেদের ভোট ফেরাতে পারবে? নাকি এর পরেও বিরোধী ভোটের মেরুকরণ ঘটে যাবে বিজেপির দিকেই।
প্রশ্ন উঠতে পারে, বামেদের কথাই কেন উঠছে? তার কারণ, আরজি করের ঘটনার পর শুভেন্দু অধিকারীরা নবান্ন অভিযান করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু দলীয় পতাকা ছাড়া এই আন্দোলনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গিয়েছেন বামেরাই। এমনকি শাসক দল ও সরকারের নেতারাও অভিযোগ করেছেন যে, জুনিয়র ডাক্তারদের ইন্ধন দিচ্ছেন বাম ও অতি বামরা।
আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের যে ৬টি বিধানসভা আসনে ভোট হবে সেগুলি হল উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি ও হাড়োয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, কোচবিহারের সিতাই ও আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট।
গত লোকসভা ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফল বলছে, এই ৬ আসনে করুণ অবস্থা ছিল বামেদের। অধিকাংশ আসনেই বিরোধী ভোটের মেরুকরণ হয়েছিল বিজেপির দিকে। এই ৬টি আসনে বামেরা গড়ে পেয়েছিল ৪.৮৬ শতাংশ ভোট।
বামেরা সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিল কোচবিহারের সিতাইয়ে। এই বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জগদীশ বাসুনিয়া পেয়েছিলেন ১২৮১৮৯টি ভোট। বিজেপির নিশিথ প্রামানিক পেয়েছিলেন ৯৯৮১২ টি ভোট। আর ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নীতীশ চন্দ্র রায় পেয়েছিলেন মাত্র ২১৬২ টি ভোট। মোট ভোটের মাত্র ০.৯ শতাংশ পেয়েছিলেন বামেরা। একদা বামেদের অভেদ্য দুর্গ ছিল সিতাই। অথচ সেখানে বামেদের ভোট কাচিয়ে চলে গেছে বিজেপির দিকে।
আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটেও তথৈ বচ অবস্খা। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক পেয়েছিলেন ৬৮৮৫৮টি ভোট। বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা ৭৯৯২১ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে আরএসপি প্রার্থী মিলি ওরাঁও পেয়েছিলেন মাত্র ৪০৪৩টি ভোট। অর্থাৎ মোট ভোটের মাত্র ২.৫।
নৈহাটিতে তবু ঠিকঠাক ভোট পেয়েছিল সিপিএম। বিজেপির অর্জুন সিং ও তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক এই আসনে যথাক্রমে ৫৯৮৭২ এবং ৭৫৩৯০টি ভোট পেয়েছিলেন। সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ ৯.৬ শতাংশ তথা ১৪৯২৫ ভোট পেয়েছিলেন।
কিন্তু আধা শহর নৈহাটির এই ধারা একই জেলার অন্য বিধানসভা কেন্দ্র হাড়োয়াতে ছিল না। হাড়োয়ায় সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দার ৭৪৭০ ভোট পেয়েছিলেন। যা মোট ভোটের মাত্র ৩.২৭ শতাংশ। বিপরীতে তৃণমূলের হাজি নুরুল ইসলাম ১৪৫৩৫৬টি, ও বিজেপির রেখা পাত্র ৩৪২৩৫ ভোট পেয়েছিলেন।
আর মেদিনীপুরে সিপিআই বিপ্লব ভট্ট প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ১১,১৮৩টি ভোট। যা মোট ভোটের ৪.৭ শতাংশ। ওই আসনে বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল তাঁর চেয়ে দশগুণ বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূলের জুন মালিয়া পেয়েছিলেন ১০৯৯২৬টি ভোট।
মেদিনীপুরের তুলনায় বাঁকুড়ার তালড্যাংরা বামেরা খানিকটা বেশি ভোট পেয়েছিল। সিপিএম প্রার্থী মোট ভোটের ৮.২ শতাংশ তথা ১৬৫২৫টি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু একদা বাম ঘাঁটি তালড্যাংরাতেও বিজেপির সুভাষ সরকার সিপিএমের থেকে ৫ গুণ বেশি ভোট পেয়েছিলেন।
উপরের ছবিতেই পরিষ্কার যে বিজেপির ভোট মঙ্গলগ্রহ থেকে আসেনি। বামেদের ভোট তাদের দিকে চলে গেছে। আর ক্রমশই ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হয়েছে বামেরা।
প্রশ্ন হল, আরজি করের ঘটনার পর বামেদের কিছু ভোট কি ফিরবে? জবাবে সিপিএমের তরুণ নেতা শতরূপ ঘোষ দ্য ওয়ালকে বলেন, আরজি করের ঘটনা এমনই যে অন্তত এই একটা বিষয়ে বিজেপি হিন্দু-মুসলমান করার সুযোগ পায়নি। তাঁর কথায়,“আরজি করের প্রতিবাদ আমরা ভোট পেতে করিনি। আমরা সেভাবে ভাবি না। এটা বাংলার মানুষের লড়াই, যে লড়াইয়ে আমরা প্রথম থেকে ছিলাম। আছি, থাকব”।
শতরূপ আরও বলেন, “তবে হ্যাঁ, মানুষের কাছে আবেদন কর যে সব কিছু বিচার করে ভরসার যোগ্য বলে মনে হলে এবারের ভোটটা আমাদের দিন। এই ভোটে তো সরকার পাল্টাবে না, কিন্তু সরকারকে একটা বড় ধাক্কা দেওয়া যাবে”।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, বামেদের কিছু ভোট যদি বিজেপির থেকে তাঁদের দিকে ফিরে আসে তাহলেও উদ্বেগের কারণ নেই তৃণমূলের। কেননা ভোট ভাগাভাগির সুবিধা শাসক দলই পাবে। ঠিক যেভাবে অতীতে সুবিধা পেতেন বামেরা।
তবে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, “ভোট ভাগাভাগির প্রশ্ন নেই। আরজি করের ঘটনা নিয়ে বামেদের প্রতিবাদকে ছোট করব না। রাজনৈতিক দল হিসাবে ওরা ঠিক কাজই করেছে। কিন্তু বাংলার মানুষ বুঝে গেছে, তৃণমূলকে ঠেকাতে পারে একমাত্র বিজেপিই। কংগ্রেস বা সিপিএম নয়। তাই তৃণমূল বিরোধী ভোটের মেরুকরণ এই ভোটেও বিজেপির দিকেই ঘটবে বলে আশা করি”।
তবে এ ব্যাপারেও বাম, বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “একাংশ সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে বাঘ সেজেছে সিপিএম। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ডাক্তারদের ইন্ধন দিয়েছে। এই ভোটেও বোঝা যাবে, ওদের মানুষ আর গ্রহণ করছে না। করবেও না আর কোনওদিন।”