দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত মাসে মুক্তি পেয়েছেন বিচারাধীন জেলবন্দি। তার পর থেকে নানা ভাবে ঘরে ফেরার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সফল হননি। বহুবার লুকিয়েচুরিয়ে চেষ্টা করেও কোনও ভাবেই নিজের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি তিনি। অবশেষে এক বন্ধুর বাড়িতেই আশ্রয় নিতে হয়েছে। মহারাষ্ট্রের এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে কোভিড মহামারীর সময়ে জেলবন্দিদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে।
মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে, বিনা বিচারে মাসের পর মাস ধরে বন্দি ছিলেন পেশায় ট্যাক্সি চালক, ৩২ বছরের এক যুবক। তাজোলা কারাগারে দিন কাটছিল তাঁর। পরিবার জামিনের টাকা জোগাড় করতে না পারায় তিনি ছাড়াও পাচ্ছিলেন না। যতদিনে সে টাকা জোগাড় হল, দেশজুড়ে জারি হয়ে গেল লকডাউন। এর পরেই মুক্তি পান তিনি।
জেলে থাকা অবস্থাতেই শুনেছেন তাঁর এলাকায় করোনার প্রকোপ মারাত্মক বেশি। তার উপর তাঁর বাবা মারা গেছেন কয়েক দিন আগে। বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন স্ত্রী। প্রতিবন্ধী ভাই বাড়ি থেকে দূরে যে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন, সেখানে আটকে পড়েছেন। বাড়িতে একা রয়েছেন তাঁর অসুস্থ মা। এই সবকিছু জেনেও অসহায় তিনি। কারণ জেল থেকে তাঁর বাড়ি প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে। ফেরার কোনও রাস্তা জানা নেই। তাই তাঁর এই মুক্তি বোধহয় বন্দিত্বেরই নামান্তর।
এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে এক সমাজকর্মীকেও তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি বাড়ি ফিরতে চান, গাড়ির বন্দোবস্ত করা যায় যদি। কিন্তু গাড়ির ব্যবস্থা হলেও তাঁকে কেউই সঙ্গে নিতে চাননি, কারণ তিনি যেখানে যাবেন, সেটি মারাত্মক সংক্রামিত কনটেনমেন্ট জ়োন। অসুস্থ মায়ের কাছে যাওয়া হয়নি তাঁর।
তবে এই বন্দি তিনি একা নন। গোটা দেশজুড়ে এরকম বহু জেলবন্দিই মুক্তি পাওয়ার পরেও বাড়ি ফিরতে পারেননি। সংখ্যাটা প্রায় ২২ হাজার। কারাগার থেকে তাঁরা মুক্তি পেয়েও বন্দি হয়েছেন লকডাউনে। ঘরে ফিরতে না পেরে এঁদের অনেকেই অবসাদে ভুগছেন। থাকা-খাওয়ার সমস্যা যে হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
তথ্য বলছে, ভারতের তেরোশর বেশি কারাগারে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ জেলবন্দি আছেন। এঁদের প্রায় ৭০ শতাংশের এখনও বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে সুপ্রিম কোর্ট বহু জেলবন্দিকে মুক্তির নির্দেশ দেয় এই লকডাউনে। বিশেষ করে যাঁদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, তাঁদের জামিন দেওয়া যেতে পারে বলে জানানো হয়। কিন্তু মুক্তি পেলেও অনেকেরই বাড়ি ফেরা হয়নি।
কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মুক্তি পাওয়া জেলবন্দিদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করছে। অনেককেই ঘরে ফেরানোরও ব্যবস্থা করেছে তারা। এরকমই এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রয়াসের তরফে জানানো হয়েছে, শীর্ষ আদালত ইতিমধ্যেই কারাগারগুলিকে যতটা সম্ভব খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন লকডাউন অমান্য করার জন্য লোকজনকে গ্রেফতার করে ফের সেই কারাগারেই বন্দি করছে।
প্রয়াসের এক কর্তা বিজয় রাঘবন জানান, বন্দিমুক্তি আইন দিয়ে জেলের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ খালি করা গেছে। বাকি গোটা জেলই এখনও রীতিমতো জনবহুল। জানা গেছে, মহারাষ্ট্রের জেলবন্দি থেকে শুরু করে জেলের কর্মকর্তা অনেকেই করোনা আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতেও বন্দিদের বাড়ি ফেরানোর কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।