শেষ আপডেট: 8th August 2024 18:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ অর্থাৎ COPD-- ফুসফুসের এই অসুখ বহু বছর ধরে সঙ্গী ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। প্রথমে হাল্কা কাশি, অল্প শ্বাসকষ্ট। এর পরে বুকের ভেতর দলা পাকানো একটা ব্যথা। কাশির দমক বাড়লে শ্বাসের সমস্যাও চাগিয়ে ওঠা। এই ধরনের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে বহু বছর কাটিয়েছেন তিনি। এবং দীর্ঘ রোগভোগের পর অবশেষে মৃত্যু।
সিওপিডি-র নানা কারণ আছে। তবে প্রথম ও প্রধান কারণ ধূমপান। সেই কারণেই একে ‘স্মোকিং ডিজিজ’ও বলা হয়। এই অভ্যেস বরাবরই ছিল বুদ্ধবাবুর। চেন স্মোকার ছিলেন তিনি। কাজে থাকলে বা বাড়িতে, ঘনিষ্ঠরা বলতেন, কখনওই সিগারেট ছাড়া দেখা যেত না তাঁকে। শুভাকাঙ্ক্ষীদের বহু অনুরোধেও কখনও বন্ধ করেননি ধূমপান। পছন্দের ব্র্যান্ড ছিল '৫৫৫'। পরিবার সূত্রের খবর, একটু বয়স হওয়ার পরে প্রায়ই বুকে ঘনঘন কফ জমে যাচ্ছে তাই অবস্থা হতো। সর্দি-কাশি হলে কমতেই চাইত না। অল্প ঠান্ডা লাগলেই নাক বন্ধ, কাশির বেগ যেন বুক ঠেলে উঠতে চাইত।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে চিকিৎসকরা রীতিমতো নিদান দিয়েছিলেন, ছাড়তেই হবে সিগারেট। ফুসফুসের যা অবস্থা হয়েছে, তাতে আর কোনও উপায় নেই। তবে সে কথাও শোনেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বলেছিলেন, চেষ্টা করলে একটু কমাতে পারবেন, আর কী করা যেতে পারে জানতে চেয়েছিলেন, তবে পুরোপুরি সিগারেট ছাড়া অসম্ভব বলেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।
তবে ২০১৭ সালে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, অবশেষে ধূমপান ছেড়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কারণ ততদিনে শ্বাসের সমস্যা ক্রমশ বদলে গেছিল ক্রনিক শ্বাসকষ্টে। সিগারেট ধরিয়ে টানার ক্ষমতা ছিল না। এক সময় প্রয়োজন হয়েছিল কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের। বেশ কয়েকবার অসুবিধা হওয়ার পরে ২০১৮ সালে বাড়িতেই পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয় বুদ্ধবাবুর জন্য। ২৪ ঘণ্টাই নাকে লাগানো থাকত সেই অক্সিজেনের নল। অর্থাৎ গত প্রায় ৫ বছর ধরে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতেই পারেননি তিনি।
এর মধ্যেই তিন বছর আগে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বুদ্ধদেববাবুকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এই সিওপিডির সমস্যা তীব্র হওয়ায়। ৬ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরের বছর, ২০২১ সালের মে মাসে ফের কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন বুদ্ধবাবু ও তাঁর স্ত্রী। প্রথম দিকে তাঁকে বাড়িতেই বাইপ্যাপের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল। পরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন আরও কমে যাওয়ায় ফের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কয়েক দিন কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ফেরেন তিনি।
চিকিৎসকরা বলছেন, ফুসফুসের এই রোগ, সিওপিডি-কে হেলাফেলা করা মানেই বিপদ ডেকে আনা। এখন সিওপিডির (COPD) সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। তবে স্মোকিং বা প্যাসিভ স্মোকিং ছাড়াও সিওপিডির অন্যতম বড় কারণ বায়ু দূষণও। বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ভাসমান কণার পরিমাণ (পিএম ২.৫) সহনশীলতার মাত্রা ছাড়ালেই তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে ফুসফুসে। ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা, ধুলো, ধোঁয়া লাগাতার শ্বাসনালী দিয়ে ভেতরে ঢুকে শ্বাসযন্ত্রকে অচল করে দিতে থাকে। যার ফল ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ তথা সিওপিডি।
এমনিতেই আজকালকার সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে সুষম ডায়েটের অভাবে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমছে। যে কোনও রোগই বড় চেহারা নিয়ে ধরা পড়ছে।