শেষ আপডেট: 18th August 2023 12:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘শিক্ষিতদের ভোট দিন’… সত্যি কথাটা সোজাসুজিই বলেছিলেন দিল্লির শিক্ষক করণ সংওয়ান (Vote For Educated)। ক্লাসে পড়ানোর সময় পড়ুয়াদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘অশিক্ষিত রাজনীতিক আমরা চাই না।’ মাস্টারমশাইয়ের এই মতামত ঘিরে এখন জল অনেকদূর গড়িয়েছে। কংগ্রেস প্রকারান্তরে অভিযোগ করেছে, আনঅ্যাকাডেমির ওই শিক্ষকের চাকরি যাওয়ার পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে। কারণ, দলের একাংশ নেতার মতে ওই শিক্ষক যে কথা বলেছেন, তাতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক উস্কে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই তাঁর চাকরি গেছে।
বস্তুত দিল্লির মাস্টারমশাই এমন এক দুর্বল জায়গায় গিয়ে ঘা দিয়েছেন, যা এক লহমায় নাড়িয়ে দিয়েছে সবকিছু। চেনা বিতর্ক ফের ফিরে এসেছে। নেতামন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? আদৌ কি আছে? ‘২০২৪ সালে দেশ শিক্ষিত নেতাই চায়’ এমন পোস্টে ছেয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
আরও পড়ুন: 'শিক্ষিতদের ভোট দিন' চাকরি খোয়ানো শিক্ষক যেন উদয়ন পণ্ডিত, পাশে দাঁড়াচ্ছে গোটা দেশ
কংগ্রেস গত কয়েকদিন ধরেই এই বিষয়টাকে নিয়ে জলঘোলা করছে। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বিতর্কের আগুন আরও একটু উস্কে টুইটে লিখেছেন, “একজন শিক্ষক কারও নাম না নিয়ে শুধু বললেন ‘নিরক্ষর নেতা’, আর বিজেপির অমনি মনে হল যে তাদের নেতার কথা বলা হচ্ছে! কংগ্রেস কিন্তু তা টের পায়নি। আচ্ছা শিক্ষার সঙ্গে কি স্যরের শত্রুতা আছে?”
খেরার টুইটের পরেই সোশাল মিডিয়ায় রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ডিগ্রি নিয়ে দেদার পোস্ট করা হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর ডিগ্রির তালিকা দিয়ে একজন টুইট করেছেন, সেন্ট স্টিফেন্সে ইতিহাস, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন রাহুল। বস্তুত, রাহুল নিজেই একবার তাঁর ডিগ্রি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন। জানা গিয়েছিল, ১৯৯৫ সালে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি এমফিল-এ করেছিলেন।
যদিও রাহুলের এমফিল ডিগ্রি নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। রাহুলের হার্ভার্ড-কেমব্রিজের ডিগ্রি নিয়ে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “চার মাসের জন্য হার্ভার্ডে ছিলেন রাহুল। চার বছরের কোর্সে আটটা সেমিস্টার হয়। তার একটিও না করে চলে এসেছিলেন তিনি। কেমব্রিজে এমফিল পাশ করলেন তার থিসিস পেপার কোথায়? স্নাতক ডিগ্রি কি দেখিয়েছেন?”
হার্ভার্ড-কেমব্রিজের প্রাক্তনী রাহুলের ডিগ্রি নিয়ে যখন এত টুইট-রিটুইট চলছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই সমাজমাধ্যমে এই বিষয়টা নিয়ে বিস্তর রঙ্গব্যঙ্গ হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’ নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করেছেন, এমন এক তথ্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছিল। পিএমও-র ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাবে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ পাশ করার কথা লেখা রয়েছে। ২০১৬ সালে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁর এম এ পরীক্ষার ফলাফলের কথা ঘোষণাও করেন। কিন্তু সেই মার্কশিট বা ডিগ্রির শংসাপত্র হাতে এসেছে কিনা বা কেউ দেখেছেন কিনা তা জানা নেই।
বিষয়টি নিয়ে (Vote For Educated) রাজনৈতিক মহলে এতই চর্চা হচ্ছে যে, বর্তমানে তৃণমূলের নেতা যশবন্ত সিনহাও একটি 'এডিটেড' টুইট করেছেন যা ভাইরাল হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধান সরকারের সর্বোচ্চ পদটির জন্যও কোনও শিক্ষাগত চৌকাঠের কথা বলেনি— প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব যাতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পূর্ণ যোগদানের পথে বাধা হয়ে উঠতে না পারে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা (Vote For Educated)। শিক্ষাগত ডিগ্রি না থাকাটা দোষের নয়, কিন্তু সে বিষয়ে অসত্য বা অস্বচ্ছতা অথবা গোপন করে যাওয়ার চেষ্টা সঠিক নয়। যেখানে যত আড়াল-আবডাল, সেখানেই তত বেশি বিতর্ক। একে অপরের গায়ে কাদা ছোড়ার চেষ্টা। দেশের শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে নিরন্তর এই কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। আর দিল্লির মাস্টারমশাই ঠিক এই জায়গাতে গিয়েই হাতুড়ির ঘা কষিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: 'মাস্টারমশাইকে স্বাধীনভাবে পড়াতে না দিলে লাভ কী!', দিল্লির সংস্থার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ