শেষ আপডেট: 29th September 2024 20:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ও আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালত থেকে জেল হেফাজতে পাঠানোর সময়ে অভিজিৎ চোট পেয়েছেন, তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সে পৃথক ঘটনা। তবে অভিজিৎকে ও সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে যে রিমান্ড লেটার পেশ করেছিল সিবিআই তাতেই এখন বড় রকমের স্ববিরোধিতা ধরা পড়েছে।
টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে রিমান্ড লেটার পেশ করার সময়ে সিবিআই বলেছিল, আরজি কর হাসপাতালে ঘটনার ব্যাপারে টালা থানার ওসি জানতে পেরেছিলেন সকাল ১০টা বেজে ৩ মিনিটে। আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তাঁকে ফোন করে তা জানিয়েছিলেন। তার পরেও তিনি ‘সিন অফ ক্রাইম’ তথা ঘটনাস্থলে পৌঁছতে ১১টা বাজিয়ে দেন।
আবার সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে চেয়ে সিবিআই যে আবেদন করেছিল, তাতে লেখা রয়েছে আরজি করের ঘটনার বিষয়টি সন্দীপ ঘোষ জানতে পারেন সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে। এ খবর জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছননি। বরং হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেন্ডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপালের মাধ্যমে একটা ধোঁয়াশামাখা অভিযোগ করিয়েছিলেন। তাও সেই অভিযোগ করানো হয়, চিকিৎসক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর। নির্যাতিতার মৃত্যুর ব্যাপারে হাসপাতাল নিশ্চিত হয়েছিল ৯ অগস্ট ১২ টা ৪৪ মিনিটে।
দ্বিতীয়ত, সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে নেওয়ার ব্যাপারে সিবিআই যে রিমান্ড লেটার পেশ করেছে তাতে লেখা রয়েছে, প্রাক্তন অধ্যক্ষ বা এমএসভিপি সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর দায়ের করাননি। বরং আত্মহত্যার নতুন তত্ত্ব খাঁড়া করার চেষ্টা হয়েছিল।
এখন আইনজীবীদের প্রশ্ন হল, টালার প্রাক্তন ওসির জন্য রিমান্ড লেটারে সিবিআই বলেছে, সন্দীপ ঘোষ অভিজিৎ মণ্ডলকে ঘটনাটা জানিয়েছিলেন। আবার সন্দীপ ঘোষের রিমান্ড নোটে বলা হচ্ছে, এমএসভিপি-র মাধ্যমে অভিযোগ করিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। তাহলে কোনটা ঠিক। এমএসভিপির অভিযোগ যদি অস্বচ্ছ হয়, তাহলে টালা থানার ওসির দায় কতটা?
দ্বিতীয়ত, সিবিআই সন্দীপ ঘোষের রিমান্ড লেটারে বলেছে, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর দায়ের করাননি। প্রশ্ন হল, তাহলে এফআইআর দায়ের করতে দেরি হওয়ার জন্য টালার থানার ওসির উপর পুরো দায় বর্তায় কীভাবে? বিশেষ করে যেখানে আত্মহত্যার নতুন তত্ত্ব খাঁড়া করার চেষ্টা করা হচ্ছিল, সেখানে তড়িঘড়ি এফআইআর লিখে ফেললে কি ত্রুটি থাকার আশঙ্কা থাকত না?
এখানে জানিয়ে রাখা ভাল, কলকাতা পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, সেদিন হাসপাতালে যে পরিস্থিতি ছিল, তাতে তাড়াহুড়ো করে এফআইআর লেখা সমীচিন ছিল না। এফআইআর লেখা সহজ কাজ নয়। তা সবকিছু মাথায় রেখে লিখতে হয়। সামান্য ত্রুটি থাকলে প্রতিপক্ষের আইনজীবী সেটিকেই হাতিয়ার করে অভিযুক্তর জামিনের আবেদন করেন।
দুই রিমান্ড লেটারেই সিবিআই আদালতে জানিয়েছে যে, যেখানে অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল, সেই চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার হলকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন সন্দীপ ঘোষ ও টালার প্রাক্তন ওসি। ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি। তবে ঘটনা হল, ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে সঞ্জয় রায় ছাড়া এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪৮ দিন হয়ে গেল।