শেষ আপডেট: 28th March 2023 14:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাঁকে সংসদে বলতে না দেওয়া নিয়ে স্বয়ং লোকসভার স্পিকার (Lok Sabha Speaker) ওম বিড়লাকে (Om Birla) একাধিকবার কাঠগড়ায় তুলেছেন কংগ্রেস (Congress) নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর সাংসদ পদ খারিজের পরও বলেছেন, স্পিকার সাহেবের সর্বদা মুখে হাসি। দেখা হলে চেম্বারে চা খেতে ডাকেন, কিন্তু সংসদে বলতে দেন না। তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর অভিযোগ, লোকসভায় দু-রকম নিয়ম চালু হয়েছে। বিজেপির জন্য একরকম, বিরোধীদের জন্য আর একরকম।
শুধু রাহুল, মহুয়ারাই নন, কমবেশি সব বিরোধী দলই লোকসভার স্পিকারের ভূমিকায় অখুশি। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়, লোকসভায় স্পিকার ওম বিড়লা রেফারির দায়িত্ব ভুলে সরকারের গোলরক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সরকারকে ছোড়া বিরোধীদের সমালোচনার তির আটকে দেওয়াই যেন তাঁদের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কংগ্রেস চাইছে এই সুযোগে লোকসভার স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে। মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতৃত্ব বিরোধী দলগুলির সঙ্গে এই ব্যাপারে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। সোমবার রাতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতে ১৯টি বিরোধী দলের বৈঠকে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বাকি দলগুলি জানিয়েছে তারা নেতৃত্বকে প্রস্তাবের কথা জানাবেন। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশকে দল দায়িত্ব দিয়েছে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা চালাতে।
মঙ্গলবারও সংসদ চলেনি। গত ১৩দিন ধরে একই চিত্র। সভা শুরুর পরই গোলমালের কথা জানিয়ে অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে দেশে গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগকে আরও জোরদার করা সম্ভব। যদিও দল জানে সংসদে এমন নিন্দা প্রস্তাব পাশ হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। কারণ, বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে লোকসভায়।
কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাব পাশ না হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অসীম। কারণ, এই প্রস্তাব পেশ হওয়াই একজন স্পিকারের জন্য খুবই অসম্মানের। যদিও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ মিলবে কিনা, তাও অনিশ্চিত। কংগ্রেস মনে করছে, প্রস্তাব পেশ হলেই সরকার ও স্পিকার চাপে পড়ে যাবেন।
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজে লোকসভার সচিবালয়ের তৎপরতা নিয়ে কংগ্রেস আগেই প্রশ্ন তুলেছে। তাদের বক্তব্য, রাহুলকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ না দিয়েই সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছে স্পিকারের অফিস। কিন্তু আইনে কোথাও বলা নেই, নিম্ন আদালতে দু'বছর বা বেশি সাজা হলেই সঙ্গে সঙ্গে সদস্যপদ বাতিল করে দিতে হবে।
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের ইস্যুতে আরও একভাবে স্পিকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। গত ৭ ফেব্রুয়ারি লোকসভায় শেষবার ভাষণ দেন রাহুল। তাতে তিনি আদানির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ১০টি প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু স্পিকার ওম বিড়লা অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলি লোকসভার কার্যবিবরণী থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাহুলের ওই ভাষণে শঙ্কিত হয়েই দ্রুত সুরাতের আদালতে চলা মানহানি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
রাহুলের ভাষণ ছেঁটে দেওয়াতেও স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পক্ষপাতী কংগ্রেস। দল আগেই বলেছে, স্পিকার ওম বিড়লা এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় সরকারের চিয়ার লিডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
নিয়ম হল, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দিন স্পিকার নিজে তাঁর আসনে বসতে পারেন না। স্পিকারের চেয়ারে বসেন ডেপুটি স্পিকার। অবাক করা বিষয় হল, ভারতের লোকসভায় গত নয় বছর ডেপুটি স্পিকার পদটি ফাঁকা। অতীতে কোনও দিন লোকসভায় এমন নজির নেই।
কেন স্পিকার ওম বিড়লার কোনও ডেপুটি নেই? আসলে ভারতের সংসদের ঐতিহ্য হল, ডেপুটি স্পিকারের পদে সব সময় বিরোধী দলের কাউকে বসানো হয়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সময় লোকসভায় বিজেপির ৩০৩ জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও তারা কোনও বিরোধী মুখকে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসানোর ঝুঁকি নিতে চায় না। সংখ্যার হিসাবে কংগ্রেসের কোনও সাংসদেরই ডেপুটি চেয়ারম্যান হওয়ার কথা ছিল।
কংগ্রেস মনে করছে, স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা গেলে সরকারকেও অস্বস্তিতে ফেলা যাবে। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়াও মজবুত হবে।
দেবের প্রশ্নের জবাবে দিল্লি জানাল, আবাস যোজনায় কেন শুধু বাংলাকে দেওয়া যায়নি