দ্য ওয়াল ব্যুরো: লন্ডনে রাহুল গান্ধীর ভাষণ ঘিরে উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় ও কংগ্রেসের (Congress) মধ্যে তুমুল বিরোধ শুরু হয়েছে। ধনকড় নজিরবিহীনভাবে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন তাঁর লন্ডনের বক্তৃতা নিয়ে। জবাবে কংগ্রেসও নজির ছাপিয়ে প্রতি আক্রমণ করেছে ধনকড়কে। দেশের উপরাষ্ট্রপতি (Vice president)সম্পর্কে প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ, তিনি সাংবিধানিক কর্তব্য ও মর্যাদা ভুলে শাসক দলের চিয়ার লিডারের মতো আচরণ করছেন।

রাহুল গত সপ্তাহে লন্ডনে একাধিক সভায় অভিযোগ করেন, নরেন্দ্র মোদীর শাসনে ভারতে গণতন্ত্র বিপন্ন। এমনকী বিরোধী সাংসদদের সংসদে পর্যন্ত মুখ খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করলেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

রাহুলের বিরুদ্ধে বিজেপি (BJP) আগেই সদলবলে সমালোচনা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার তাতে নয়া মাত্রা যুক্ত করেন ধনকড়। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা কর্ণ সিংহের বই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি ধনকড় বলেন, যে কথা লন্ডনে গিয়ে এক নেতা বলেছেন আমি তার বিরোধিতা না করলে সংবিধানের প্রতি অমর্যাদা করা হবে। সংসদে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অসত্য অভিযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভার সদস্য কেসি বেণুগোপাল উপরাষ্ট্রপতির কথার প্রতিবাদ করে বলেন, সংসদে বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করলে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।

উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। রাহুল ভাষণে নাম না করে তাঁকেও নিশানা করেছেন। কিন্তু ধনকড় যেভাবে প্রতি আক্রমণে গিয়েছেন তা নজিরবিহীন বলেই ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। অতীতে উপরাষ্ট্রপতিরা কেউই দলীয় রাজনীতিতে জড়াননি। ধনকড়ের শেষ পূর্বসূরি বিজেপির ভেঙ্কাইয়া নায়ডু দলের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি দলীয় রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেন না। রাজ্যসভার অধিবেশনে যা বলার বলতেন। শুধু নায়ডু নন, অতীতে কোনও উপরাষ্ট্রপতিই বিরোধী দলকে সভার বাইরে আক্রমণ করেননি। সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যেই নিজেদের আবদ্ধ রেখেছেন।

কিন্তু ধনকড় ব্যতিক্রম। তিনি এর আগে সনিয়া গান্ধীকেও নাম না করে আক্রমণ করেছেন। সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংসদই প্রধান এবং ক্ষমতাশালী বলে উপরাষ্ট্রপতি ধনকড় মন্তব্য করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি নিয়োগে সংসদের তৈরি আইনকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দেওয়ায় বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হন তিনি। সংসদে কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সনিয়া গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, সাংবিধানিক পদে আসীন মানুষেরাও সরকারের হয়ে ব্যাট ধরছেন। বিচার বিভাগের নিন্দা করছেন। এটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। ধনকড় সনিয়ার ওই মন্তব্যেরও জন্য নাম না করে তাঁকে সতর্ক করেন। তখনও তীব্র আপত্তি তোলে কংগ্রেস।

রাহুল গান্ধীকে নিয়েও ধনকড়ের বক্তব্য অনভিপ্রেত বলে মনে করছে দল। এক বিবৃতিতে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘কিছু পদ ও প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে আসীন ব্যক্তিদের নিজেদের দলীয় আনুগত্য মুক্ত রাখতে হয়। ভারতের উপরাষ্ট্রপতির কার্যালয় তেমন একটি প্রতিষ্ঠান। সংবিধান রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের অতিরিক্ত কর্তব্য উপরাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে। সেই পদে আসীন ব্যক্তি রাহুল গান্ধী সম্পর্কে অবাক করা মন্তব্য করেছেন।

রমেশ বলেন, ‘রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে উপরাষ্ট্রপতির আম্পায়ার, রেফারির ভূমিকা পালন করা কর্তব্য। তিনি সরকারের চিয়ারলিডার হতে পারেন না।’ কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে নতুন কোনও কোনও কথা বলেননি। দেশে বলা কথাগুলিই বলেছেন।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, গত দু সপ্তাহে বিরোধী দলের অন্তত ১২জন সাংসদকে সংসদ অবমাননার নোটিস ধরানো হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করলেই বিরোধী সাংসদদের বিধির কোপে পড়তে হচ্ছে।

সুন্দরী আরশোলা! নতুন প্রজাতির খোঁজ, পোকেমনের এই চরিত্রের সঙ্গে মিলও পেলেন বিজ্ঞানীরা