কর্নেল সোফিয়া কুরেশি
শেষ আপডেট: 9 May 2025 16:03
'সোফিয়া কুরেশি। নাম তো সুনা হি হোগা!'
তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে এই বাক্যটা যদি এখন কেউ বলেন, মনে হয় খুব একটা অত্যুক্তি করা হবে না। ৭ মে রাতভর অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindur) চালিয়ে চিরশত্রু পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো নিশ্চিহ্ন করে ফেলা নিয়ে গোটা দেশ যখন উৎসাহে ফুটছে, তখন সেনার তরফে সে খবর অফিসিয়ালি বলতে এসেছিলেন মহিলা সেনা অফিসার, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি (Colonel Sofia Qureshi)। ভারতীয় সেনার (Indian Army) মুখ, অপারেশন সিঁদুরের অন্যতম লিড।
সেদিন সকালে সেনা প্রেস ব্রিফিংয়ের সময়ে তাঁর অনমনীয় কণ্ঠে বলা সেই শান্ত অথচ দৃপ্ত কথাগুলো শুনেছিল সারা দেশ। হাঁ করে জেনেছিল, অভিযানের প্রতিটি ধাপ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আর এক মহিলা অফিসারও, উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিংও। নারীশক্তির অনন্য প্রতিভূ দুই মুখকে কুর্নিশ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না গোটা দেশ।
কিন্তু জানা গেল, এই ২০২৫-এ উজ্জ্বল হয়ে ওঠা কর্নেল সোফিয়ার আলো সেই কবেই পড়েছে এই বাংলার মুখে! শুধু তাই নয়, তাঁর 'গাইডেন্সে' পথ দেখেছে এই রাজ্যেরই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে! তাঁর কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে, সেনায় কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছে বাঙালি তরুণ-তরুণীর ঝাঁক!
বিষয়টা খোলসা করে বলা যাক।
সালটা ২০২১। কোভিড ও লকডাউনে অবরুদ্ধ গোটা দেশ তথা এ রাজ্যও। সে সময়ে রাজ্য সরকারের তরফে কেরিয়ার গাইডেন্স নিয়ে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ অনলাইন ওয়েবিনারের। ধারাবাহিকভাবে, প্রতি সপ্তাহে ইউটিউবে হতো এই অনুষ্ঠান। এক এক পর্বে এক এক বিশিষ্ট ব্যক্তি আসতেন, কথা বলতেন, পথ দেখাতেন কেরিয়ারের নানা দিক নিয়ে। এই কেরিয়ার গাইডেন্স অনুষ্ঠানেই অতিথি হয়ে এসেছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি! ইউটিউবে তাঁর সেই প্রোগ্রাম এখনও রয়েছে। দেখুন ওয়েবিনারটি।
সে সময়ে ডব্লিউবিএমডিএফসির তরফে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দায়িত্বে ছিলেন, আইএএস ডক্টর পিবি সেলিম। বর্তমানে তিনি ডব্লিউবিপিডিসিএল-এর চেয়ারম্যান ও এমডি। তাঁরই উদ্যোগে ২০২২ সালের শেষের দিকে এই সরকারি অনলাইন ওয়েবিনারে অতিথি বক্তা হয়ে এসেছিলেন কর্নেল সোফিয়া।
পিবি সেলিম বলেন, 'ওই প্রোগ্রামে আমরা রাজ্যের বাইরের বহু বিশিষ্ট লোকজনকে আনতে পেরেছিলাম। তার মধ্যে একটা ওয়েবিনার কনডাক্ট করেছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। সে সময়ে তিনি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে পোস্টেড ছিলেন। তিনি সিডিএস পরীক্ষা ক্র্যাক করা এবং আর্মিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন বাংলার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। বিশেষ করে মেয়েরা কীভাবে যোগ দিতে পারে আর্মিতে, যেহেতু মেয়েদের অংশগ্রহণ এতে কম, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছিলেন তিনি। কীভাবে আর্মির কমিশনার বা অফিসার ব়্যাঙ্কে যোগ দেওয়া যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছিল। অনেকেই উপকৃত হয়েছিল, সেনায় যোগ দেওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছিল ওই প্রোগ্রাম দেখে।'
সেলিম আরও জানান, সব মিলিয়ে শ'খানেক ওয়েবিনার হয়েছিল, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে, যুবক-যুবতী যোগ দিয়েছিলেন। এক বছর ধরে চলা এই অনুষ্ঠানের মোট ৯৯টা এপিসোড রয়েছে। তারই একটিতে জ্বলজ্বল করছেন সোফিয়া। যে মুখকে সদ্য চিনেছে গোটা দেশ।
ওই ভিডিওয় কর্নেল সোফিয়ার পরিচয় করানো হয়, দেশের এক অনন্যসাধারণ নারী হিসেবে। ভারতীয় সেনায় তাঁর দক্ষতা ও কৃতিত্বের কথাও বলা হয়। বলা হয়, সমস্তরকম স্টিরিওটাইপ ভেঙে ভারতীয় সেনার একের পর এক ধাপ পেরিয়ে গেছেন তিনি।
এর পরে নিজের পরিচয় দিয়ে সোফিয়া বুঝিয়ে বলেন, সেনায় যোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এনসিসি সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে অন্যান্য যোগ্যতার কথা। কত বয়স হতে হবে, কত নম্বর থাকতে হবে এসএসবি দেওয়ার জন্য, কবে সে পরীক্ষার ফর্ম বেরোয়, সবটাই বিস্তারিত বলেন তিনি। উল্লেখ করেন, ছেলে বা মেয়ে যে কোনও কেউ এই পরীক্ষায় বসতে পারেন। সেনায় যোগ দেওয়া সংক্রান্ত আরও একাধিক প্রশ্নের উত্তর জলের মতো বুঝিয়ে বলেন তিনি। আলাদা করে বলেন, মেয়েরা কীভাবে সেনায় যোগ দিতে পারেন।
তবে যদি আরও একটু পিছনে হাঁটা যায়, ২০২০ সালে, তখনও একবার কর্নেল সোফিয়া কুরেশির নাম জেনেছিল সারা দেশ। খাস সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কর্নেল সোফিয়াকে দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে রেখে বলেছিলেন, ভারতীয় সেনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ দেশে একটা অন্য মাত্র যোগ করেছে। নারীশক্তির গর্বিত মুহূর্ত রচনা করেছিল সোফিয়া কুরেশির সাফল্য। সে সাফল্যের বহমানতাই আজ ছুঁয়ে ফেলেছে গোটা দেশের হৃদয়।