দ্য ওয়াল ব্যুরো: কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, এ কথা সেই কবেই গানে-গানে বলে গেছিলেন মান্না দে। সে গান এত বছর ধরে পুষ্ট করেছে বাঙালির নস্ট্যালজিয়াকে। হারিয়ে ফেলা আড্ডার স্মৃতি রোমন্থন করেছেন সকলেই। কিন্তু কেউ বোধহয় ভাবতেও পারেননি, কফি হাউসের আড্ডাটা সত্যিই কখনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে! পুরোপুরি বন্ধ!
করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে মার্চ মাস থেকেই বন্ধ হয়ে গেছিল কফি হাউস। তার পরে পেরিয়ে গেছে ১০০ দিন। 'সেই আড্ডাটা' আর সত্যিই ছিল না। দরজাই খোলেনি কফি হাউসের। তবে এবার প্রতীক্ষার অবসান। আজ বৃহস্পতিবার থেকে খুলে গেল কফিহাউস। সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বইপাড়ার আড্ডা আবার জমবে আজ থেকে।
করোনা সতর্কতা হিসেবে অবশ্য চেনা কফিহাউসে বেশ কিছু বদল আসছে। আড্ডার ছন্দও অন্যরকম হয়ে যাবে বইকী। আগের মতো গমগমে কফিহাউস হয়তো এই মুহূর্তে ফিরবে না, ফিরবে না তিলধারণের জায়গা না থাকা সেই চেনা ছবি। কিন্তু আড্ডা যে আবার শুরু হচ্ছে, তাতেই খুশি সকলে।
ইন্ডিয়ান কফি ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, কফি হাউসের দোতলাই কেবল খোলা হচ্ছে। তিনতলার যে ব্যালকনি, তা আপাতত বন্ধ থাকবে। দোতলায় মোট যতটা জায়গা ছিল, যত চেয়ার-টেবিল ছিল, তার ৫০ শতাংশ চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে আপাতত চলবে কফি হাউস। যাতে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
শুধু তাই নয়, বদল হচ্ছে কফি হাউস খোলা থাকার সময়কালেও। এবার থেকে সপ্তাহে সাত দিনের বদলে ছ’দিন খুলবে কফিহাউস। রবিবার বন্ধ থাকবে। আগের মতো সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা নয়, তার বদলে সকাল ১১ টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে কফি হাউস।
২৫ মার্চ থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল লকডাউন। তার আগে থেকেই অবশ্য জমায়েত করতে বারণ করা হয়েছিল সরকারি ভাবে। তাই ২০ মার্চের পর থেকেই আর কেউ যাননি কফি হাউস। এখন শুরু হয়েছে আনলক ফেজ় ২। এই পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল, রেস্তরাঁ খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু কফি হাউস নিয়ে আলোচনা চলছিল। কারণ সেখানে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা আর পাঁচটা রেস্তরাঁর মতো সহজ হবে না।
বুধবার এনিয়ে বৈঠক করার পরে ঠিক হয়, আজ বৃহস্পতিবার ২ জুলাই থেকে খোলা হবে কফি হাউস। এর পরেই গোটা বিল্ডিংটি স্যানিটাইজ করা হয় নিয়ম মেনে। ঠিক করা হয়, প্রবেশের সময়ে মাস্ক পরে থাকা বাধ্যতামূলক। হাতও ধুতে হবে স্যানিটাইজারে। খাবারের মেনু এবং পরিবেশনেও বদল আসছে। চিনামাটির কাপ নয়, কাগজের কাপেই পরিবেশন করা হবে চা-কফি। খাবারের পদও কমানো হবে।
তবে যাই হোক না কেন, কফি হাউস যে খুলছে, তাতেই খুশি আড্ডাপ্রিয় বাঙালি।