শেষ আপডেট: 13th December 2024 21:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একই দিনে দুই ভিন্ন ছবি!
৯০ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করতে না পারায় শুক্রবার আরজি কর ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযুক্ত ধৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। ঘটনার জেরে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে সিবিআই।
একই দিনে ফরাক্কায় ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে এক অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে আদালত। মাত্র ৬১ দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি হওয়ায় প্রশংসা কুড়োচ্ছে জেলা পুলিশ। বস্তুত, কদিন আগে জয়নগর কাণ্ডেও তদন্তে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনাতেও ৬২ দিনের মাথায অভিযুক্তের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কীভাবে এই অসাধ্যসাধন করল জেলা পুলিশ? ফরাক্কা কাণ্ড নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার। সেখানে তদন্ত প্রক্রিয়ার একাধিক তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
১৩ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর দিন ফরাক্কা থানার মাঠপাড়া রেল কলনীর বাসিন্দা দীনবন্ধু হালদারের (৪৬) বাড়ির মধ্যে থেকে ওই নাবালিকার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্লাস্টিক ব্যাগের ভেতর মোড়া ছিল দেহ। মুখে কাপড় গোঁজা। পেশায় মাছ ব্যবসায়ী দীনবন্ধুকে জেরা করে পরে তার সহযোগী আর এক মাছ ব্যবসায়ী শুভজিৎ হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এডিজির কথায়, "নির্মমতম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল মেয়েটি। তবে এটি কোনও অঘটন নয়, পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছিল।"
ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাবা-মায়ের সঙ্গে দিল্লিতে থাকত নাবালিকা মেয়েটি। পুজোর সময় মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। প্রতিবেশী দীনবন্ধু জানতো মেয়েটির ফুলের শখ ছিল। সুযোগ বুঝে সেদিন রঙীন ফুল উপহারের লোভ দেখিয়ে মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা মাফিক সেখানে হাজির হয় শুভজিতও।
এডিজির কথায়, "ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, নাবালিকা প্রাণ হারানোর পরও দুই অভিযুক্ত যৌন নির্যাতন চালিয়েছিল। কতটা বিকৃত মানসিকতা হলে এমনটা হয়। জেরায় অভিযুক্তরা স্বীকার করেছিল, রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে দেহটি ফেলে দেওয়ার জন্য তাঁরা প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছিল। কিন্তু তার আগেই বাড়ির লোক মেয়েটির খোঁজ করতে শুরু করে। সেই সূত্রে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের ভিত্তিতে সকলে দীনবন্ধুর বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল।" সেই সূত্রে অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় দেহও।
জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার আনন্দ রায়ের নেতৃত্বে সিট গঠন করেছিল জেলা পুলিশ। যাবতীয় তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে মাত্র ২১ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারীরা। অন্যদিকে আদালতে পুলিশকে যোগ্য সঙ্গত জুগিয়েছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।
এডিজি জানান, "গুগল ম্যাপের মাধ্যমে ঘটনার দিন সংশ্লিষ্ট সময়ে অভিযুক্ত দুজনের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন চিহ্নিত করে তাদের গতিবিধির ডিজিট্যাল প্লটিং করা হয়। এক্ষেত্রে সফটওয়ারের মাধ্যমে ড্রোনের সাহায্যও নেওয়া হয়েছিল। এই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই ঘটনাস্থলে অভিযুক্তদের উপস্থিতি আমরা আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছি।"
শুধু তাই নয়, ঘটনায় দুই অভিযুক্তের জামাকাপড়ে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, যে ওই রক্ত মেয়েটির শরীরের। মেয়েটির শরীরে যে সিমেন পাওয়া গিয়েছিল সেটি যে দীনবন্ধুর শরীরের তাও ডিএনএর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।
ঘটনাস্থল থেকে দুটো আধপোড়া সিগারেটের টুকরো উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তাতে লেগে থাকা স্যালাইবা বা লালা রস ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করেছিলেন। অন্যদিকে আদালতে বিচারকের উপস্থিতিতে দুই অভিযুক্তর লালারস সংগ্রহ করা হয়। পরে দুটো মিলিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল যে ওই আধপোড়া সিগারেট দুটি অভিযুক্তদেরই খাওয়া। এভাবেই একাধিক অকাট্য প্রমাণের দৌলতে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হয়েছে বলে দাবি এডিজির।