শেষ আপডেট: 7th August 2023 11:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চাঁদ ছুঁতে চলেছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। কঠিন পথ প্রায় পেরিয়েই এসেছে। এবড়ো খেবড়ো চাঁদের গহ্বর এখনই ধরা পড়ছে চন্দ্রযানের হাই-রেজোলিউশন ক্যামেরা। এবার চাঁদের মাটিতে পা রাখার অপেক্ষা মাত্র। গত ৫ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৭টায় চাঁদের প্রথম কক্ষপথে সফলভাবে চন্দ্রযানকে ঢুকিয়ে দিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এবার দূরত্ব ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী ৯ অগস্ট দুপুরে পরবর্তী অগ্নিপরীক্ষা। ওই দিন বেলা ২টোর পর চাঁদের পরবর্তী কক্ষে ঢুকবে চন্দ্রযান। এইভাবে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাবে চাঁদের দিকে।
১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রকে ভারতের সবথেকে ভারী ও উন্নত রকেট এলভিএম৩-এম৪ বা বাহুবলী রকেটের পিঠে চেপে পৃথিবীর মাটি ছেড়েছিল চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)।
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চন্দ্রযান ৩-এর 'অরবিট ম্যানুভারিং' সফল ভাবে সম্পন্ন হয় গত জুলাই মাসেই। পৃথিবীকে পাঁচ চক্কর কেটে চাঁদের দেশের দিকে পা পাড়ায় তৃতীয় চন্দ্রযান।
গত ১ অগস্টেই চাঁদের বলয়ে (স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স) প্রবেশ করেছিল চন্দ্রযান ৩।
শনিবার ৫ অগস্ট সন্ধেয় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের আওতায় চলে আসে। ঢুকে পড়ে চাঁদের প্রথম কক্ষপথে।
প্রায় ২.৬ লক্ষ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গেছে চন্দ্রযান। বর্তমানে এটি চাঁদের থেকে সর্বনিম্ন ১৭০ কিমি এবং সর্বোচ্চ ৪৩১৩ কিমি দূরত্বে নির্দিষ্ট কক্ষপথে রয়েছে।
ইসরো জানিয়েছে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের অধীনে যত দিন চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) ছিল, তত দিন ধাপে ধাপে তার কক্ষপথ এবং গতি বাড়ানো হচ্ছিল। পাঁচটি ধাপের কক্ষপথ পেরিয়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টান ছাড়িয়েছে চন্দ্রযান। এবার ঠিক তার উল্টো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পৃথিবী থেকে চাঁদের দিকে যেতে কক্ষপথের আয়তন বাড়ানো হচ্ছিল, আর চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ার পরে ক্রমশ চাঁদের দিকে এগিয়ে যেতে কক্ষপথের আয়তন কমাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যেমন গতি কমবে, অন্য দিকে তেমন ধাপে ধাপে বৃহত্তর থেকে ক্ষুদ্রতর কক্ষপথে পৌঁছবে চন্দ্রযান-৩। এবারেও পাঁচটি কক্ষপথ পেরিয়ে চাঁদের পরিমণ্ডলে ঢুকতে হবে।
আগামী ৯ অগস্ট ভারতীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টোর মধ্যে আরও এক ধাপ নীচে নামবে এই মহাকাশযান।
মহাকাশযানটি যখন চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে, তখন বন্ধ হবে প্রোপালশন মডিউলের ইঞ্জিন। এরপরই ধীরে ধীরে এটি নেমে যাবে চাঁদের দিকে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার 'বিক্রম'।
৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় অবতরণ করার কথা এই মহাকাশযানের। এই এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখনও অবধি যে দেশগুলো চাঁদের মাটিতে যান নামিয়েছে, তারা কেউই দক্ষিণ মেরুর ওই আঁধার পিঠে নামতে পারেনি। ভারত যদি পারে তাহলে চাঁদ-জয় করেই ফিরবে। এখনও পর্যন্ত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সবথেকে কাছে অবতরণ করেছিল নাসার সার্ভেয়ার-৭। ১৯৬৮ সালে ৪০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের কাছে ল্যান্ড করেছিল নাসার মহাকাশযান।
চাঁদের আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে তার চারপাশে বেশ কয়েক পাক ঘুরে ক্রমশ গতি কমিয়ে তা চলে আসবে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে। তার পর শুরু হবে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। চাঁদের ৩০ কিলোমিটার উপর থেকে পালকের মতো ২০ মিনিট ধরে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামবে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। একেই বলা হচ্ছে সফট ল্যান্ডিং। কিন্তু যদি চাঁদের আকর্ষণের সঙ্গে চন্দ্রযান খাপ খাওয়াতে না পারে তাহলে প্রবল গতিতে ছুটে গিয়ে চাঁদের পিঠে মুখ থুবড়ে পড়বে। না হলে, দুরন্ত গতিতে চাঁদের কক্ষপথ থেকে ছিটকে মহাশূন্যে চলে যাবে।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের আকর্ষণে তার কক্ষপথে এগিয়ে যাওয়া এবং গতিবেগ কমিয়ে চাঁদের মাটিতে নামা–এই দুটো স্টেজই সবচেয়ে জটিল। যদি এর কোনওটাই সফল না হল তাহলে চন্দ্রযান ছিটকে গিয়ে আবার ঘুরে চলে আসবে পৃথিবীর কক্ষপথে। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে আবার চাঁদে পাঠানোর মতো জ্বালানি আর থাকবে না। সে ক্ষেত্রে ভারতের চন্দ্রযাত্রা ব্যর্থ হয়েছে বলেই ধরে নেওয়া হবে। চন্দ্রযান-২ চাঁদের কক্ষপথে সঠিভাবেই ঢুকেছিল, চাঁদের ১০০ কিলোমিটার উচ্চতা অবধিও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে, তবে ধীরে ধীরে চাঁদের মাটিতে নেমে আসার পদ্ধতি বা সফট ল্যান্ডিংয়ের সময়েই হিসেবে গণ্ডগোল হয়েছিল। ফলে দ্বিতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার মুখ থুবড়ে পড়েছিল চাঁদের মাটিতে।