শেষ আপডেট: 27 May 2023 03:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যাঁর বিরুদ্ধে দেশের অ-হিন্দিভাষীদের উপর হিন্দি (Hindi) চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, সেই অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দেশের দুটি জনপ্রিয় সাহিত্য পুরস্কার তুলে দিল (Centre scraps 60 year old award)। দুই পুরস্কারই দেওয়া হয় অ-হিন্দিভাষী লেখকদের হিন্দি সাহিত্যকর্মের জন্য। পুরস্কার দুটি হল ‘হিন্দিতর ভাষী পুরস্কার’ এবং ‘হিন্দি শিক্ষা পুরস্কার’। দুটিই দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন সেন্ট্রাল হিন্দি ডাইরেক্টরেট। প্রথমটি চালু করেছিলে জওহরলাল নেহরু।
দেশে ভাষা সংক্রান্ত বিষয়টি দেখাশোনা করে থাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই মন্ত্রকের প্রধান অমিত শাহের বিরুদ্ধ জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির। বছর চার আগে তিনি দাবি করেন, হিন্দি রাষ্ট্রভাষা। যদিও এমন কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত নেই। ভারত সরকার এবং বেশ কিছু রাজ্য সরকারের কাজের ভাষার একটি হল হিন্দি। শাহ তাঁর বক্তব্যে অনড় থেকে দাবি করেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের কথপোকথনের ভাষা হওয়া উচিৎ হিন্দি। ইংরিজি বলা গোলামি।’ অনেকেই মনে করেন, শাহের বক্তব্য আসলে হিন্দুত্ববাদীদের হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের সংকল্পকে সামনে রেখে তোলা ‘হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থান’ স্লোগানেরই অংশ।
শাহের বক্তব্যে তীব্র আপত্তি ওঠে বিভিন্ন রাজ্য থেকে। জোরালো প্রতিবাদ হয় দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। আগুন জ্বলে তামিলনাড়ুতে। শাহ বলেন, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিতে বিপুল সংখ্যায় হিন্দি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
সেই শাহের মন্ত্রকের অধীন সেন্ট্রাল হিন্দি ডাইরেক্টরেট কেন অ-হিন্দিভাষীদের জন্য প্রদত্ত হিন্দি সাহিত্য পুরস্কার আগাম আলোচনা ছাড়াই তুলে দিল? এই ধরনের পুরস্কার চালুর সময় বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। তুলে দেওয়ার সময়ও সংশ্লিষ্ট মহলের মতামত নেওয়াই রীতি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শাহের মন্ত্রক সেই পথে হাঁটেনি।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এটা আসলে মোদী-শাহ সরকারের আশু রাজনৈতিক প্রয়োজন থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত। লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র দক্ষিণের রাজ্যগুলির মন কাড়তে তৎপর যেখানে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সবচেয়ে জোরালো। বিশেষ করে তামিলনাড়ু। দক্ষিণীদের বার্তা দিতেই এই পুরস্কার দুটি তুলে দেওয়া হল।
সরকারি ঘোষণায় জোরালো কোনও কারণ দর্শানো হয়নি। বলা হয়েছে, এই সংক্রান্ত অনেক পুরস্কার চালু আছে। তাই এই পুরস্কার দুটি তুলে দেওয়া হল। দুটি পুরস্কারই অ-হিন্দিভাষী ১৯জন করে লেখককে দেওয়া হত। দ্বিতীয় পুরস্কারটির বিষয় ছিল হিন্দিতে বিজ্ঞান-সাহিত্য।
যদিও শিক্ষাজগতের অনেকেই সরকারের যুক্তি মানতে নারাজ। শিক্ষামহলের অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। কারণ, এই পুরস্কার প্রাপকেরা হলেন সেই অ-হিন্দিভাষী মানুষ যাঁরা স্বেচ্ছায় হিন্দি শিখেছেন। কেন্দ্র আসলে চায় অ-হিন্দিভাষীরা কথ্য ভাষা হিসাবে হিন্দিকে গ্রহণ করুক। তেমন কোনও ক্যাটিগরির পুরস্কার আগামী দিনে চালু হওয়া অসম্ভব নয়।
দিল্লির দয়াল সিং কলেজের অধ্যাপক প্রেম তিওয়ারির বক্তব্য, ‘এটা ঠিক যে হিন্দি ভাষা প্রসারের জন্য অনেকগুলি পুরস্কার চালু আছে। কিন্তু সেগুলির কোনওটাই হিন্দিতর ভাষী পুরস্কারের সমতূল নয়।
জওহললাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক চমনলাল ২০০১ সালে হিন্দিতর সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর মাতৃভাষা পাঞ্জাবি। তিনি সরকারি সিদ্ধান্তে বিস্মিত। তাঁর কথায়, ‘মনে হচ্ছে সরকার হিন্দি প্রসারের নতুন কোনও উপায় চালু করার ভাবনাচিন্তা করছে।’ চমনলাল অবশ্য ২০১৬ সালে পুরস্কারটি ফিরিয়ে দেন জেএনইউ-র পড়ুয়াদের উপর পুলিশি নিপীড়ন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার ধারায় মামলা করার প্রতিবাদে।
মোদীর ন’বছর: বিজেপি বলল কামাল করেছে ভারত, ৯ সওয়াল তুলল কংগ্রেস