হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কার্যত দুষ্কর বুঝে রাস্তাতেই প্রসব করালেন আশাকর্মী। মা ও সদ্যোজাত পুত্র সন্তান এখন ভাল আছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থলের ছবি
শেষ আপডেট: 22 May 2025 19:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাস্তা খারাপ, কাদায় আটকে গেল গাড়ির চাকা। হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় রাস্তাতেই প্রসব হল শিশুর। নারায়ণগড়ের পাকুড়সেনি এলাকার ঘটনা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কার্যত দুষ্কর বুঝে রাস্তাতেই প্রসব করালেন আশাকর্মী। মা ও সদ্যোজাত পুত্র সন্তান এখন ভাল আছে বলে জানা গেছে।
বুধবার ভোর ৪টে নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় পাকুড়সেনির বাসিন্দা সোনালি সিংয়ের। তাঁর স্বামী সুব্রত সিং সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্থানীয় আশাকর্মী মানসী পাত্রের সঙ্গে। এলাকায় বেহাল রাস্তা এবং ভোরে অ্যাম্বুল্যান্সে বা মাতৃযান পাওয়ার অনিশ্চয়তার কথা ভেবে মানসী তৎক্ষণাৎ তাঁর আত্মীয় বিশ্বজিৎ রাউতের মারুতি গাড়ি নিয়ে সোনালি সিংয়ের কাছে যান এবং তাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু গাড়ি কাদাময় ও খানাখন্দে ভরা রাস্তা পেরোতে পারেনি। চাকা কাদাতে একেবারে আটকে যায়। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন মানসী পাত্র। কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা ও সাহসের ভরসায় গাড়ির মধ্যেই প্রসব করান তিনি। জন্ম হয় পুত্রসন্তানের।
গাড়ির চালক কোদাল দিয়ে কাদা সাফ করে পথ তৈরি করেন, এরপর মানসী সোনালি সিং ও নবজাতককে নিয়ে পৌঁছে যান বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ রয়েছেন।
ঘটনাটি ফের একবার সামনে নিয়ে এসেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের করুণ চিত্র। পাকুড়সেনির রাস্তা পাকা হলেও তার রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, একটু বৃষ্টি হলেই সেখান থেকে আর হাঁটা যায় না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বহুবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও রাস্তা মেরামতির কোনও স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সোনালির স্বামী সুব্রত সিং বলেন, 'রাস্তার এমন অবস্থায় যদি মানসী দিদি সাহস না দেখাতেন, আমার স্ত্রী এবং সন্তানের কী হত জানি না। উনি দেবদূত।' জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, 'আশাকর্মীরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রথম সারির সৈনিক। মানসীর কাজ সত্যিই অনুকরণীয়।'
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পাকুড়সেনির রাস্তা সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই তহবিল বরাদ্দ হয়েছে, কাজ শুরু হবে কয়েক মাসের মধ্যেই। তবে, স্থানীয়রা দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
এছাড়াও, ভোরবেলায় জরুরি পরিষেবা পাওয়ার ব্যবস্থা যেমন অ্যাম্বুলেন্স ও মাতৃযানের প্রাপ্যতা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের আরও সক্রিয় ভূমিকাও চাইছেন সাধারণ মানুষ।