শেষ আপডেট: 28th December 2023 17:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নিরন্তর খেটে চলেন তাঁরা। স্বামী-সন্তান, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার, জামাকাপড় কাচা, 'চাকরি' না করলেও গৃহবধূদের কাজের কি শেষ আছে! কিন্তু তারপরও অনেক সময়েই কাছের মানুষের কাছ থেকে শুনতে হয়, 'তুমি তো বাড়িতেই থাকো... কী এমন কাজ করো!' তাই দিবারাত্র খেটেও সেই কাজের জন্য কোনও 'মূল্য'ই পান না গৃহবধূরা। কিন্তু আদালত মনে করে, ঘরের কাজের জন্য গৃহবধূদেরও পারিশ্রমিক রয়েছে। ঠিক কত টাকা বেতন পেতে পারেন একজন গৃহবধূ, তাও জানিয়ে দিল আদালত।
কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি অজয় গুপ্ত মন্তব্য করেন, গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাঁদের দিনরাত কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, গৃহস্থালির কাজের জন্য গৃহবধূদের প্রত্যেকদিন ১০০ টাকা করে ধার্য করতে হবে।
২০০৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা লুফতা বেগম। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পরই ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন মৃতার ছেলে মীর শামিম। ছেলের অভিযোগ ছিল, যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না তাঁরা। সেইসময় ৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন মীর। যদিও সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা সেই টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
নিম্ন আদালত মীরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে এমন অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন লুফতা বেগমের ছেলে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অজয় গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে উঠে আসে গৃহবধূদের উপার্জন প্রসঙ্গ। বিমা সংস্থার তরফে সওয়াল করার সময় তাদের আইনজীবী বলেন যে, মৃতা গৃহবধূ ছিলেন। তাঁর কোনও উপার্জন ছিল না। তাই এত টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে কেন?
সেখানেই বিচারপতি মন্তব্য করেন, "কে বলেছে গৃহবধূরা বেকার? সংসারে তাঁদের অনেক অবদান আছে।" বিচারপতি আরও বলেন, "গৃহবধূরা সারা বছর, দিনরাত কাজ করেন। তাঁদের কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাতে হলে তাঁকে নির্দিষ্ট বেতন দিতে হত। তাই সংসারের কাজ করার জন্য গৃহবধূদের আর্থিক মূল্য রয়েছে। তাঁদের কখনওই বেকার বলা চলে না।' শুনানি শেষে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, মৃতার পরিবারকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বিমা সংস্থাকে।