শেষ আপডেট: 18 January 2024 14:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেন্দ্র-রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে টানাপড়েন। রয়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকায় দুর্নীতির অভিযোগও। সেই আবহেই রাজ্যে জব কার্ড দুর্নীতির তদন্তে কমিটি গঠন করল হাইকোর্ট। কেন্দ্র ও রাজ্যের একজন করে প্রতিনিধি, ক্যাগ এবং অ্যাকাউন্ট জেনারেলের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম।
কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়পক্ষকেই যত দ্রুত সম্ভব এই আধিকারিকদের নাম জানাতে হবে। ওই কমিটি গোটা রাজ্যে ভুয়ো জব কার্ড নিয়ে তদন্ত করে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেবে। ১০০ দিনের কাজ করেও টাকা না পেয়ে ৩২৭ জন পোস্টকার্ড পাঠিয়ে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার জানান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। এই প্রসঙ্গেই ন্যায্য প্রাপকদের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়ালও করেন তিনি।
এদিন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ''বর্তমান পরিস্থিতি কি? যতই দুর্নীতি বা যা কিছু থাক যারা ন্যায্য প্রাপক তাদের জন্য কী করা হয়েছে? কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে?'' ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ চালু করতে কেন্দ্র এবং রাজ্যকে উদ্যোগী হতে হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। ২০২৩ -২৪ অর্থবর্ষে যাতে নতুন করে কাজ চালু হয় তার জন্য অ্যাকশন প্ল্যান উভয়পক্ষকে তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
এই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রের আইনজীবী অশোক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ভুয়ো জব কার্ড দেখার দায়িত্ব রাজ্যের। কেন্দ্র এই প্রকল্পের টাকা দেয়। রাজ্যে জেলা শাসকের নির্দেশে পঞ্চায়েত স্তরে সুপারভাইজার, নোডাল অফিসার নিয়োগ হয়। তারাই ওই টাকা বণ্টন করে। ইতিমধ্যে ২.৪৫ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। রাজ্যে রয়েছে ১.৫৫ কোটি জব কার্ড। কিন্তু তার মধ্যে কতগুলি আসল আর কত ভুয়ো তা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের।
রাজ্যে জব কার্ড নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে সওয়াল করে সিবিআইও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য বলেন, বেশ কয়েকটি জেলায় এখনও অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিকভাবে পুরুলিয়াতে এই দূর্নীতি পাওয়া গেছে। আদালত যদি সিবিআইকে নির্দেশ দেয় তাহলে সিবিআই তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পারে।
যদিও কেন্দ্রের দাবি মানতে নারাজ রাজ্য।। এদিন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ২০২১ সালে কেন্দ্রের একটি দল এসেছিল মালদা এবং উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায়। তারা জব কার্ড নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছিল। ২০২৩ সালে কলকাতায় কেন্দ্রের ১৫টি টিম আসে। তারা ফিরে গিয়ে রাজ্যের কাছে কিছু তথ্য চেয়ে পাঠায়। রাজ্যের তরফে সেগুলি পাঠানো হয়। তারপরে আর টাকা দেয়নি কেন্দ্র। নতুন করে এই প্রকল্প চালু করার জন্য একাধিকবার কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে যাতে।
অন্যদিকে, এদিন খেত মজদুর সংগঠনের তরফে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন - ''কাজের আবেদন জানিয়ে অনেকে কাজ পায়নি। কেন্দ্র বা রাজ্য কারা দায়িত্ব নেবে সেটা তারাই ভাবুক। কিন্তু তাদের দায়িত্ব শ্রমিকদের জন্য কাজ ও উপযুক্ত পারিশ্রমিকের ব্যাবস্থা করা।''
প্রসঙ্গত, ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলছে। একদিকে যখন রাজ্যের তরফে হিসেব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ কেন্দ্রের, অন্যদিকে রাজ্যের দাবি, তালিকা ধরে সব তথ্য পাঠালেও টাকা আটকে রাখা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া না মেটানো নিয়ে সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারও আগে দিল্লিতে ধর্নায় বসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ন্যায্য প্রাপকদের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিও।