ঘটনার সূত্রপাত বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে। সেই সময় রাজ্য সরকার জমিদাতাদের জন্য একাধিক পুনর্বাসন ও চাকরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।
বিচারপতি অমৃতা সিনহা
শেষ আপডেট: 14 June 2025 08:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিবাহিত হলেই কি আইনি অধিকার থেকে ছেঁটে ফেলা যাবে? বাবা-মায়ের সম্পত্তিতে যেমন ছেলেমেয়ে সকলের সমান অধিকার, তেমনই সরকারি সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও লিঙ্গ বা বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে বিভাজন করা যায় না — এই মন্তব্য করেই রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
ঘটনার সূত্রপাত বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে জমি অধিগ্রহণকে (Land Acquisition) কেন্দ্র করে। সেই সময় রাজ্য সরকার (State Govt) জমিদাতাদের জন্য একাধিক পুনর্বাসন ও চাকরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। ঘোষণা করা হয়, জমিদাতার পরিবারে যদি কোনও বেকার সন্তান থাকেন, তবে তিনি 'এক্সেম্পটেড কোটায়' চাকরির জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
এই নিয়ম মেনেই এক বিবাহিত মহিলা, যিনি একজন জমিদাতার কন্যা, রাজ্যের শ্রম দফতরে চাকরির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু দফতরের তরফে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোটার সুবিধা শুধুমাত্র ছেলে ও অবিবাহিত মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য, বিবাহিত মেয়েরা এর আওতায় পড়েন না।
এই নির্দেশের প্রতিবাদে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ওই মহিলা। একক বেঞ্চ মামলাকারীর পক্ষে রায় দিয়ে বলে, রাজ্য কোনও ভাবেই লিঙ্গ বা বিবাহিত-অবিবাহিত বিভাজন করে সুযোগ-সুবিধা বণ্টন করতে পারে না। আদালতের মন্তব্য ছিল, “বাবা-মায়ের সম্পত্তিতে যেমন ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার, তেমনই সরকারি কোটার ক্ষেত্রেও এই বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
তবে রাজ্য সরকার এই রায় মানতে অস্বীকার করে এবং ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সেখানেও সরকারের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের রায় কার্যকর না হওয়ায়, মামলাকারী আদালত অবমাননার অভিযোগে নতুন মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা কড়া ভাষায় বলেন, “রাজ্য সরকার কি চায় নারী-পুরুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে? কেন বিবাহিত মেয়েদের বঞ্চিত করা হবে অধিকার থেকে?” তিনি আরও নির্দেশ দেন, আগামী ১০ জুলাই ডিপার্টমেন্ট অফ এমপ্লয়েমেন্ট-এর সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে সশরীরে হাজির হয়ে আদালতের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে — কেন একজন জমিদাতার বিবাহিত কন্যাকে বঞ্চিত করা হয়েছে সরকারি কোটার অধিকার থেকে।