শেষ আপডেট: 1st February 2020 13:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: টি২০ বাজেট নামেই, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেট বক্তৃতা একেবারে টেস্ট ক্রিকেটের মতোই দীর্ঘ। এবারের বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। গত এগারো বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার সবচেয়ে তলানি ঠেকেছে চলতি অর্থবর্ষে। এই অবস্থায় মোদী সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল অর্থনীতিকে জোর ধাক্কা দিয়ে বৃদ্ধির গতি ত্বরাণ্বিত করা।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, এই বাজেটের লক্ষ্য হল আয় বাড়ানো এবং একই সঙ্গে ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা যাতে অর্থনীতির বুনিয়াদ মজবুত হয়।
একনজরে দেখে নিন এই বাজেটে কার লাভ হল এবং কার লোকসান।
লাভ যাদের
পরিবহণ পরিকাঠামো
দেশের পরিবহণ পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য বাজেটে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থার ওপরে জোর দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে হাইওয়ের উন্নয়ন এবং জাতীয় সড়ককে ১২টি ভাগে ভাগ করে তার উন্নয়ন ঘটানো।
এর ফলে লাভ হতে পারে লারসেন অ্যান্ড টুব্রো, কেএনআর কনস্ট্রাকশনস এবং আইআরবি ইনফ্রার মতো সংস্থার।
বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদন
মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিন পণ্য, সেমি-কন্ডাক্টর এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় নানা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম তৈরির ব্যাপারে উৎসাহ দিতে চায় সরকার। এর ফলে এই ধরনের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ডিক্সন টেকনোলজিস, অ্যাম্বার এন্টারপ্রাইজ, সুব্রোজ প্রভৃতি সংস্থার লাভ হবে।
গ্রামীণ ভারত
গ্রামোন্নয়নের জন্য ২.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। আগামী অর্থবর্ষে কৃষিঋণ বাবদ ১৫ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়ার লক্ষমাত্রা ধার্য করেছেন তিনি।
মৎস্য উৎপাদনে সরকার জোর দেওয়ায় এবং মৎস্যচাষের জন্য ৫০০টি খামার তৈরির যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন তার ফলে লাভ হতে পারে অবন্তী ফিডস, অ্যাপেক্স ফ্রোজেন ফুডস ও ওয়াটারবেসড প্রভৃতি সংস্থার।
গ্রামাঞ্চলের গুদামগুলির মধ্যে যোগাযোগস্থাপন করার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তিনি জানিয়েছেন, এই সব গুদাম ও কোল্ড স্টোরেজগুলির মধ্যে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে এবং বাতানুকূল কামরারও ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য রাজ্যগুলিকে কম দামে জমি দেওয়ার আবেদন করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাকি যা টাকা লাগবে তা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে সবচেয়ে বেশি লাভ হতে পারে কন্টেনার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার।
লাভ হতে পারে স্বল্পমেয়াদী ভোগ্যপণ্যের (এফএমসিজি) বাজারে, একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই ইমামি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, ডাবুর, টাটা গ্লোবাল প্রভৃতি সংস্থার শেয়ার দর বেড়ে যায়।
জল
যে সব জেলায় জলের সঙ্কট রয়েছে, সেই সব জেলায় জলসঙ্কট মেটানোর কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এর ফলে লাভবান হতে পারে ভিএ টেক ওয়াবাগ লিমিটেড। এই সংস্থাটি জল পরিবহণ ও নিকাশিব্যবস্থার পরিকল্পনা করে।
জলের উপরে সরকার জোর দিতেই তিন সপ্তাহের মধ্যে শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি হয়ে যায় শক্তি পাম্পস ইন্ডিয়া লিমিটেডের।
২০২৪ সালের মধ্যে দেশের সব বাড়িতে পাইপের সাহায্যে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা প্রস্তাবের কথা সরকার ঘোষণা করার ফলে জৈন ইরিগেশন সিস্টেমস লিমিটেড, কেএসবি লিমিটেড, কির্লোস্কার ব্রাদার্স লিমিটেড, জেকে এগ্রি জেনেটিকস লিমিটেড, পিআই ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের লাভ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বচ্ছ ভারতের জন্য ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী, এর সুফল পেতে পারে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, আইটিসি, প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বেল প্রভৃতি সংস্থা।
টেলিকম সংস্থা
ভারত নেট বা ভারত ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক লিমিটেডের উপরে নতুন করে জোর দিতে শুরু করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী, এটি মূলত গ্রামীণ ব্রডব্যান্ড পরিষেবা। এজন্য ছ’হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব করেছেন তিনি। এর ফলে লাভ হতে পারে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও এইচএফসিএল লিমিটেড।
অনলাইন শিক্ষা
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বেশি করে জোর দিয়েছেন শিক্ষার উপরে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের জন্য তিনি ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন।
দেশের সেরা ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার পুরোপুরি অনলাইন শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবে স্নাতক স্তর থেকে। এর ফলে লাভ হতে পারে অনলাইন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন টেকনোলজি এবং এমটি এডুকেয়ারের মতো সংস্থার।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা
ডেটা সেন্টার পার্ক তৈরির জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রো, এইচসিএল টেকনোলজিস, টেক মাহিন্দ্রার মতো বড় সংস্থার পাশাপাশি মাঝারি মাপের সংস্থা এলটিআই, মাইন্ডট্রি, পার্সিস্ট্যান্ট ও হেক্সাওয়্যারের লাভ হতে পারে। এর ফলে লাভ হতে পারে আদানি এন্টারপ্রাইজেরও।
পাইপলাইন ও শহরে গ্যাস সরবরাহ
জাতীয় গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প ১৬,২০০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ২৭ হাজার কিলোমিটার করার প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
ওয়েলস্পান কর্পোরেশন, মহারাষ্ট্র সিমলেস লিমিটেড, রত্নমণি মেটালস অ্যান্ড টিউবস লিমিটেড, জিন্দাল শ, ম্যান ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্ডিয়া লিমিটেড প্রভৃতি সংস্থার লাভ হতে পারে এর ফলে।
ন্যাশনাল গ্যাস গ্রিডের ফলে লাভ হতে পারে আইজিএল, এমজিএল এবং গুজরাত গ্যাসের।
লোকসান যাদের
বিমা
রাষ্ট্রায়ত্ত ভারতীয় জীবনবিমা নিগমের একাংশ বিক্রি করার প্রস্তাব করা মাত্রই ২০১৯ সালে যে সব জীবনবিমা সংস্থাগুলির লাভ করেছিল তাদের শেয়ারের দাম পড়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে এসবিআই লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি, এইচডিএফসি লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি এবং নিপ্পন লাইফ ইন্ডিয়া অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক
২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে কোনও টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী। যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে সরকার কোনও অর্থ না দেয় তা হলে মোদী সরকারের আমলে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে। এর প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, কানাড়া ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া এবং পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের উপরে।
এর ফলে এসঅ্যান্ডপি বিএসই ব্যাঙ্ক ইন্ডেক্সের পতন হয়েছে ১.৫ শতাংশ যা ২০ জানুয়ারির পর থেকে সর্বাধিক।
রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণ শিল্প
রিয়েল এস্টেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আলাদা করে কিছু ঘোষণা না করায় শেয়ার দর পড়েছে গোদরেজ প্রপার্টিজ, ওবেরয় রিয়েলটি লিমিটেড ও ডিএলএফ লিমিটেড ও প্রেস্টিজ এস্টেটের। বেশ কিছুদিন ধরেই এই ক্ষেত্রটি ডেভেলপারদের জন্য ঋণের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা চাইছিল।
ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য যে কর ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে তার ফলে অবশ্য কিছুটা সুবিধা হতে পারে এই ক্ষেত্রের। করছাড়ের ফলে মধ্যবিত্তদের কিছুটা সুবিধা হতে পারে।
সার কোম্পানি
রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানোর কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করার ফলে অন্য রাসায়নিক সার উৎপাদন সংস্থার পাশাপাশি অসুবিধায় পড়েছে রাষ্ট্রীয় কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্টিলাইজার্স লিমিটেড। এর প্রভাব পড়তে পারে ম্যাঙ্গালোর কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্টিলাইজার্স, চম্বল ফার্টিলাইজার্স অ্যান্ড কেমিক্যাল লিমিটেড ও মুদ্রাজ ফার্টিলাইজার লিমিটেডের উপরে।
লজিস্টিকস
জাতীয় ন্যাশনাল লজিস্টিকস পলিসি রূপায়ণ দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে ব্লু ডার্ট, গতি ও মহীন্দ্রা লজিস্টিকসের উপরে প্রভাব পড়তে পারে। তারা এই ধরনের নীতির জন্য বহু দিন ধরেই অপেক্ষায় রয়েছে।