২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষবার সশরীরে ব্রিগেডের সমাবেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
শেষ আপডেট: 8th August 2024 17:37
সুমন বটব্যাল
ব্রিগেড সমাবেশ আর সেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থাকবেন না তা কি কখনও হয়!
শারীরিক অসুস্থতার কারণে তখন ঘরবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেটা ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। লাল পতাকায় ছেয়েছে বিগ্রেড সমাবেশ। পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাট থেকেই সবকিছুর খোঁজখবর রাখছিলেন। শেষ মুহূর্তে নাছোড় বুদ্ধবাবু চিকিৎসকদের নির্দেশ উড়িয়ে নাকে নল, অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গী করেই লালফৌজকে নেতৃত্ব দিতে ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।
টিভির পর্দায় তখন ঘন ঘন ব্রেকিং। মাঠে সমর্থকদের উল্লাস। সকলেই অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন, বুদ্ধবাবু কখন মঞ্চে উঠবেন, ভাষণ দিতে না পারলেও অন্তত নিজস্ব স্টাইলে হাত নাড়বেন! কিন্তু নাহ্, ভগ্নশরীর সাধ না দেওয়ায় সেদিন মঞ্চে উঠতে পারেননি সিপিএমের বাংলার একমাত্র তারকা নেতা। মঞ্চের পিছনে গাড়িতে বসেই বেশ কয়েক মিনিট দলের তরুণ নেতৃত্বর ভাষণ শুনে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। আক্ষেপে ঝরেছিল কমরেডদের কণ্ঠে, একবার চোখের দেখাও যদি দেখতে পেতাম!
বুদ্ধবাবু না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার পর থেকেই বাম কর্মী, সমর্থকদের আলোচনায় উঠে আসছে এমনই হাজারও টুকরো টুকরো স্মৃতি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষবার সশরীরে ব্রিগেডের সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
দলের প্রবীণ নেতা, কর্মীদের কথায়, ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে প্রবেশের সময় থেকেই বরাবরই বুদ্ধবাবুর অন্যতম পছন্দের জায়গা ছিল ব্রিগেড সমাবেশ। নেতা হওয়ার অনেক আগে থেকেই এ মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তাঁর নাড়ির টান। কর্মীদের কথায়, তাই বোধহয় ভগ্নশরীরেও চিকিৎসকদের বারণ উপেক্ষা করে ব্রিগেডের মাঠে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
একুশের ব্রিগেড কিংবা বিধানসভা ভোট, সিপিএম সামনে এনেছিল বুদ্ধবাবুর অডিওবার্তা। যাতে স্পষ্ট হয়েছিল, সেই রাশভারী কণ্ঠস্বর ভেঙে গিয়েছে। ভাঙা গলাতেই কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এও বলেছিলেন,, দলের অসময়ে কমরেডদের পাশে না থাকার যন্ত্রণা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবেন না তিনি।
২০২৪ সালের ব্রিগেডের আগে পাম অ্যাভেনিউতে গিয়ে বুদ্ধবাবুর বার্তা নিয়ে এসেছিলেন দলের তরুণ নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বুদ্ধবাবুর সেই বার্তা দিয়েই শেষ হয়েছিল বামেদের এবারের ব্রিগেড সমাবেশ। এমনকী লোকসভা ভোটেও সোশ্যাল মাধ্যমে হঠাৎই ফুটে উঠেছিল বুদ্ধবাবুর সেই রাশভারী কণ্ঠস্বর। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলার কর্মী, সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে বুদ্ধ-আবেগ কাজে লাগানোর প্রয়াস দেখা গিয়েছিল। কর্মীদের কথায়, কমরেডদের কাছে মনোবলের আর এক নাম যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
।