শেষ আপডেট: 3rd September 2023 15:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘এই তো রাহুল গান্ধীর হাতে রাখি।’ রাখি বন্ধন উৎসবের দু’দিন পর রবিবার বিকালে এমনই মন্তব্য-সহ একটি ছবি এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা বলছেন রাহুল গান্ধীকে তাঁর বোন প্রিয়ঙ্কা এবার রাখি পরাননি, তাঁরা একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চোখ দেখিয়ে নিন।
আসলে রবিবার ছুটির দিনে কংগ্রেস নেতাদের এমন তৎপকতার কারণ এক্স হ্যান্ডেলেই সর্ব ভারতীয় বিজেপির শেয়ার করা একটি ভিডিও। সেটি একটি ভিডিও প্রতিবেদন। যার মূল বিষয়, রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সম্পর্কের তুমুল অবনতি হয়েছে। অবনতির দৃষ্টান্ত হিসাবে সঞ্চালিকা দাবি করেছেন, এবার রাখি পূর্ণিমাতে প্রিয়ঙ্কা দাদা রাহুলকে রাখি পরাননি। দু’জনের সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয়েছে।
তবে ভিডিও’র সামান্য অংশই রাখি সংক্রান্ত। মূল বিষয় প্রিয়ঙ্কা দাদা রাহুলের উপর বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। কারণ রাহুল তাঁকে দলের সামনের সারিতে আসতে দিতে চাইছেন না। অথচ, দলের জন্য প্রিয়ঙ্কা জান লড়িয়ে দিচ্ছেন।
ভিডিও’তে বলা হয়েছে, লালুপ্রসাদের দুই পুত্র তেজপ্রতাপ ও তেজস্বী, সমাজবাদী পার্টিতে কাকা শিবপালের সঙ্গে ভাইপো অখিলেশ এবং এনসিপি’তে অজিত পাওয়ারের সঙ্গে বোন সুপ্রিম সুলহের তিক্ত সম্পর্কের মতোই এখন তলানিতে ঠেকেছে রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সম্পর্ক।
বিজেপি ভিডিও’তে দাবি করেছে, প্রিয়ঙ্কার এখন চোখ খুলে গিয়েছে। তিনি বুঝতে পারছেন, দলের জন্য তিনি যে পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন সেই তুলনায় প্রাপ্তি সামান্যই। আর এর পিছনে আছে রাহুল গান্ধীর ষড়যন্ত্র।
বিজেপি’র আরও দাবি মা সনিয়াও বারে বারে রাহুলকে এগিয়ে দিয়ে প্রিয়ঙ্কাকে কোণঠাসা করে রেখেছেন। যদিও রাহুল এবং সনিয়ার কেউই প্রিয়ঙ্কার প্রচার ছাড়া জিততে পারতেন না। প্রিয়ঙ্কা নাকি এখন বুঝতে পেরেছেন, তাঁকে শুধু প্রচারে মুখ করা হচ্ছে, দলের মুখ থাকছেন রাহুলই। অথচ দাদার কোনও কৃতিত্ব নেই। হালে যে টুকু যা সাফল্য এসেছে তা তাঁর জন্যই, এমনটাই নাকি মনে করছেন প্রিয়ঙ্কা।
ভিডিও’তে আচার্য প্রমোদ নামে এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতার বক্তব্য আছে। তিনি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস যদি সত্যিই সিরিয়াস হয় তাহলে দলের উচিৎ প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে দলের মুখ এবং প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা। বিজেপির বক্তব্য, প্রবীণ কংগ্রেস নেতার বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রসঙ্গত, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এখন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। সভাপতির পর সাধারণ সম্পাদক পদই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া তিনি উত্তর প্রদেশের মতো বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
কংগ্রেস দলগতভাবে এখনও বিজেপির এই ভিডিও প্রচারকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। প্রতিক্রিয়া যা দেওয়ার হাত শিবিরের নেতা-নেত্রীরা ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচমুখে প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপি হঠাৎ গান্ধী পরিবারের ভাই-বোনের সম্পর্ক নিয়ে এমন প্রচারে নামল কেন। বিশেষ করে দলের সর্ব ভারতীয় এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিও’টি শেয়ার করে পদ্ম শিবির বুঝিয়ে দিয়েছে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সম্পর্কের অবনতির কথা তারা প্রচারে তুলে ধরবে। যদিও ভিডিও’টির উপস্থাপনা অত্যন্ত নিম্নমানের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছে, এটাও আসলে পদ্ম শিবিরের প্রচারের একটি কূট-কৌশল। বিরোধীদের জোট বাঁধার মুখে এই ধরনের প্রচার দৃষ্টি ঘোরানোরই চেষ্টা।
ঘটনাচক্রে গত শুক্রবার মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর দিল্লি ফিরে রাহুল গান্ধী গিয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের বাড়িতে। সেখানে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সাংসদ কন্যা মিসা প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে মাংস রান্না করে খাওয়ান। রান্নায় হাত লাগান রাহুলও। সনিয়া পুত্রের জন্য পাটনায় নিজের পছন্দের দোকানের মাংস সকালের ফ্লাইটে আনিয়ে রেখেছিলেন আরজেডি সুপ্রিমো। লালুপ্রসাদের বাড়ির ডিনারের মেনু জানতে পেরে প্রিয়ঙ্কা দাদাকে ফোনে বলেন, আমার জন্য একটি নিয়ে এসো। একটি সংবাদমাধ্যমের ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে সেদিন বোনের জন্য মাংস ও রুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন রাহুল। প্রিয়ঙ্কা সেদিন লালু প্রসাদের বাড়ি থেকে পাঠানো মাংস-রুটি দিয়েই ডিনার সারেন।
চিন, পাকিস্তানকে প্রধানমন্ত্রীর জবাব, ‘জি-২০’র অনুষ্ঠান ভারতের যে কোনও রাজ্যে করতে পারি’