শেষ আপডেট: 21st December 2021 05:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সতর্ক করার পরেও সংসদে বিজেপি এমপিদের হাজিরায় তেমন উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উল্টে সোমবার এক চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে দেশের শাসক দলকে। দেখা যায় দলের যে এমপি’রা মন্ত্রীদের প্রশ্ন করেছেন, তাঁদের মধ্যে ন'জন সভায় অনুপস্থিত। সব মিলিয়ে প্রশ্নকর্তা এমপি মোট ১৪জন অনুপস্থিত ছিলেন। বিজেপির ন'জন ছাড়া বাকি পাঁচজন ছিলেন কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দলের। বিজেপির ওই অনুপস্থিত এমপিদের তালিকায় নাম আছে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের। নিয়ম হল, অনুপস্থিত থাকলে দল এবং স্পিকারের অফিসকে তা জানিয়ে রাখা। কিন্তু অনুপস্থিত এমপিরা কেউই তা করেননি। লোকসভা, রাজ্যসভায় সাংসদদের অনুপস্থিতি নতুন নয়। কিন্তু সোমবারের ঘটনায় বিজেপির অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে তাহল, প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করার পরেও সাংসদদের অধিবেশনে না থাকার প্রবণতা। যা থেকে অনেকে মনে করছেন, এটা হল দল ও সংসদীয় দলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের রাশ আলগা হওয়ার লক্ষণ। গত ৭ ডিসেম্বর মোদী সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় এমপি-দের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, আপনারা কাজ না করলে আমরা আপনাদের সরিয়ে দেব। দেখা যায়, বিজেপি ৩০৩ জন এমপির মধ্যে সেদিন ২৫০ জন উপস্থিত। পরদিন ৮ ডিসেম্বর হাজিরা বেড়ে হয় ২৬০। ৯ ডিসেম্বর হাজির ছিলেন মাত্র ২৬১ জন দলীয় এমপি। অর্থাৎ হাজিরার তেমন উন্নতি হয়নি মোদী বলার পরেও। লক্ষ্য করা গিয়েছে, অনেক এমপি সংসদের হাজিরা খাতায় সই করে অধিবেশন কক্ষে মুখ দেখিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। যেমন, মোদীর হুঁশিয়ারির পরদিন বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার সময় অধিবেশন কক্ষে হাজির ছিলেন বিজেপির ৬০ থেকে ৭৫ জন এমপি। অথচ ততক্ষণে সংসদের হাজিরা খাতায় দু’শোর বেশি এমপির সই ছিল। অনেকেই খাতায় সই করে অধিবেশন কক্ষে মুখ দেখিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। দলীয় এমপিদের অনেকে অবশ্য বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হলেন সংসদের নেতা। তিনি নিজেই সংসদে দিনের পর দিন আসেন না। শুধু বিরোধী দল নয়, শাসক দলের এমপিদেরও প্রধানমন্ত্রীর দর্শন পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সংসদে এলে তাঁর কাছে এমপিরা ঘরোয়া আলোচনায় অনেক বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পান। কারণ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কাছে সময় চেয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া খুবই কঠিন। তিনি ঘনঘন সংসদে এলে দলীয় এমপিদের হাজিরাও বাড়বে। সংসদে দু-ভাবে মন্ত্রীরা সাংসদদের প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন। এক ধরনের প্রশ্ন তারকা চিহ্নিত বলে গণ্য হয়। সেগুলির জবাব মন্ত্রীরা অধিবেশন কক্ষে হাজির থেকে দিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে লিখিত জবাব সংসদে পেশ করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট সাংসদ তিনটি অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে পারেন। একই বিষয়ে দু’জন অন্য সাংসদকেও প্রশ্ন করার অনুমতি দেন স্পিকার। কিন্তু প্রশ্নকর্তা সাংসদ হাজির না থাকলে মন্ত্রী লিখিত বক্তব্যটুকুই শুধু সংসদের সচিবের কাছে পেশ করে দেন। তারকা চিহ্নিত বলে বিবেচিত না হওয়া প্রশ্নগুলির জবাব শুধু সংশ্লিষ্ট সদস্যকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার দেখা যায়, ১৪ জন সাংসদ প্রশ্নোত্তর পর্বে অনুপস্থিত। অর্থাৎ তাদের প্রশ্নগুলি যখন আলোচনার জন্য ওঠে তারা তখন অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না। বিজেপি অনুপস্থিত নয়জনের মধ্যে ছিলেন স্বয়ং লোকসভায় দলের চিফ হুইপ রাকেশ সিং। যিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর দলীয় এমপিদের নিয়ে বৈঠক করে হাজিরা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। যদিও পরে তিনি দাবি করেন, সংসদেই ছিলেন। কিন্তু প্রশ্নটি আলোচনার ওঠার সময় অধিবেশন কক্ষের বাইরে গিয়েছিলেন। সোমবার হাজিরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থ, শিক্ষা, বৃত্তি শিক্ষা, ক্ষুদ্র শিল্প, পর্যটন, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন থাকায় ওই মন্ত্রকের মন্ত্রীরা সকলেই সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মৌখিক প্রশ্নের জবাব দেন। কিন্তু দেখা যায় ১৪ জন সাংসদ উঠে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীদের কোন অতিরিক্ত প্রশ্ন করেননি। এঁদের মধ্যে ন'জন ছিলেন বিজেপির।