শেষ আপডেট: 7th December 2020 02:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অতীতের প্রসঙ্গ টেনে এনে দিল্লিতে লাগাতার চলা কৃষক বিদ্রোহের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাল বিজেপি। কৃষকদের মনে করিয়ে দিল, বহু দিন আগে কৃষকদেরই দাবিতে কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ হয়েছিল। আর এখন সেই কর্পোরেটের ভূমিকা কেন বেশি, সেই অভিযোগ তুলেই এত বড় আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা! আজ, রবিবার, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ একটি পুরনো সংবাদপত্রের পাতার ছবি টুইট করেন। 'ট্রিবিউন টুডে' নামে পাঞ্জাবের সেই ইংরেজি খবরের কাগজের হেডলাইন রয়েছে, "গম চাষের ক্ষেত্রে কর্পোরেটদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হোক: দাবি কৃষকদের।" সেই সঙ্গে তিনি লেখেন, "এটা ২০০৮ সালের কথা। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরাই তখন দাবি করছিলেন, কৃষি-মার্কেটিংয়ে কর্পোরেটদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হোক। একই কৃষক সংগঠন যে এখন দ্বিচারিতা করছে, তা বোঝা যাচ্ছে।" এই টুইটে তিনি হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখেন, ফার্মার্স উইথ মোদী। https://twitter.com/blsanthosh/status/1335581094054223875 ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে, ততকালীন কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার রাজ্যগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, বেসরকারি কৃষিবাজারের জন্য। তিনি সেসময়ে মধ্যপ্রদশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংব চৌহানকে চিঠিতে লিখেছিলেন, "বর্তমান এপিএমসি আইন সংশোধনের কোনও প্রয়োজন নেই। পুরনো আইন যা আছে তাতে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ আরও বাড়বে, কৃষকদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে কৃষি ও বাণিজ্য দুই-ই আরও ভাল হবে।" এখন ১০ দিনেরও বেশি সময় হয়ে গেল, হাজার হাডার কৃষক কার্যত দিল্লি অবরুদ্ধ করে রেখেছেন নতুন কৃষিবিল প্রত্যাহারের দাবিতে। দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেও কোনও সুরাহা মেলেনি। ফের বুধবার পরবর্তী বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়েছে। তার আগের দিনই অবশ্য দেশব্যাপী ধর্মঘট ডেকেছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। বিরোধী দলগুলি এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি সমর্থন জানিয়েছে এই ধর্মঘটে। কিন্তু বিজেপি এখন বোঝাতে চাইছে, 'প্রকৃত' কৃষক যাঁরা, তাঁরা সরকারের সঙ্গেই আছেন এবং কৃষিবিলের সমর্থম করছেন। যাঁরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন, আন্দোলন করছেন, তাঁরা হয় বিরোধী কংগ্রেস দলের দ্বারা প্রভাবিত নয় দেশদ্রোহী। এই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের 'খলিস্তানি' বলতেও ছাড়েনি শাসকদল। এ বিষয়ে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন, "আমরা জানতে পেরেছি, আন্দোলনের ভিড়ে এরকম কিছু লোক মিশে আছে।" মনোহর লাল খাট্টার ইতিমধ্যেই কৃষকদের প্রতি অসংবেদী আচরণের জন্য সারা দেশের একটা বড় অংশের দ্বারা সমালোচিত হয়েছেন। কৃষকদের আন্দোলন থামাতে জলকামান থেকে টিয়ার গ্যাস সবকিছুই প্রয়োগ করেছেন তিনি। বারবার বাধা দিয়েছেন দিল্লি যেতে। অকালি দলনেতা সুখবীর সিং বাদল এই ঘটনায় খাট্টারের তীব্র সমালোচনা করে টুইট করেন, "হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার কৃষকদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, আন্দোলনরত কৃষকদের খলিস্তানি বলেছেন, তার তীব্র বিরোধিতা করছি। এটা ওঁদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করা ছাড়া আর কিছু নয়।" গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে দিল্লি আসার পথে বারবার বাধা পেতে হয়েছে কৃষকদের। অনেক জায়গায় ব্যারিকেড করে আটকানো হয়েছে তাঁদের। কোথাও লাঠিচার্জ, কোথাও জলকামানের সামনে পড়তে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাতেও থামেনি মিছিল। ট্রাকে করে, পায়ে হেঁটে কয়েক লাখ কৃষক জড়ো হয়েছেন দিল্লি সীমান্তে। সেখানেই অবস্থান করছেন তাঁরা। এই আন্দোলনে তাঁরা অনেক সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে পেয়েছেন। প্রতিদিনই যেন বহর আরও বাড়ছে আন্দোলনের।