শেষ আপডেট: 13th January 2023 10:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিজেপি (BJP) যে মুসলিম, খ্রিস্টানদের (Muslim-Christian) মন জয় করতে চাইছে, গত বছর হায়দরাবাদে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মতো মুসলিম মন পাওয়ার জন্য হিন্দি বলয়ে মডেল রাজ্য হিসেবে দল বেছে নিয়েছে হিন্দুত্বের ল্যাবরেটরি উত্তরপ্রদেশকে, জনসংখ্যার ২০ শতাংশ যেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
একই উদ্দেশে দক্ষিণে বিজেপি মডেল করেছে কেরলকে (Kerala)। দক্ষিণের ওই রাজ্যের ধর্মীয় সমীকরণ মাথায় রেখে সেখানে মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টানদেরও কাছে পেতে চাইছে দল।
এই কাজের ভার দল সঁপেছে মহারাষ্ট্রের নেতা প্রকাশ জাভড়েকরকে। নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার একদা শিক্ষা এবং পরিবেশ মন্ত্রী জাভড়েকর দু বছর আগে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সংগঠনের কাজে ফিরে যান। দলীয় সূত্রের খবর, প্রথমে জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন এবং শিল্পের জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র প্রদান বিলম্বের কারণে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অসন্তোষের মুখে মন্ত্রিত্ব যায় মহারাষ্ট্রের এই নেতার।
যদিও সংগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ কোনও দায়িত্ব তাঁকে এত দিন দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের খাস লোক জাভড়েকরকে অবশেষে গুরুদায়িত্ব দিল দল।
কেরল বিধানসভায় বিজেপির কোনও বিধায়ক নেই। ২০১৯-এ মোদী ঝড়ের মধ্যেও বাম ও কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য প্রাচীরে ফাটল ধরাতে পারেনি পদ্ম শিবির। যদিও যে রাজ্যগুলিতে সঙ্ঘের প্রভাব প্রশ্নাতীত, কেরল তার অন্যতম। হিন্দুত্ববাদী শিবিরের এই থিঙ্কট্যাংকের সক্রিয়তা সত্ত্বেও পদ্ম শিবির তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। কেরল বিজেপির এই ব্যর্থতা নিয়ে মাস দুই আগে তিরুবনন্তপুরম সফরে দলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপরই আরএসএস থেকে আসা জাভড়েকরকে পাঠানো হয় কেরলের ভার দিয়ে। ফলে দলের পাশাপাশি জাভড়েকরেরও অগ্নিপরীক্ষা কেরলে।
বিজেপি সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের এই নেতা ঘন ঘন কেরল সফরে যাচ্ছেন। তিনি খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের বিভিন্ন নাগরিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দল মনে করছে, এই সব সংগঠনের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে দুই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বৃহত্তর অংশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং বিজেপি সম্পর্কে অসূয়া, অবিশ্বাস দূর করা সম্ভব হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা শেষের মুখে জাভড়েকর কেরলে সক্রিয় হয়েছেন দুই ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে দলের মূল স্রোতে যুক্ত করতে। ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল জাত, ধর্ম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মিলনের কথা বলছেন। তিনি মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বারে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, কেরলে বিজেপি যাচ্ছে খ্রিস্টান ও মুসলিম মহল্লায়।
বিজেপির সেই মিশন খানিক সফল হয়েছে তিরুবনন্তপুরমে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে বিপন্ন মৎস্যজীবীদের নিয়ে আন্দোলনে। আন্দোলনে গির্জার লোকজনকে পথে নামাতে সক্ষম হয় গেরুয়া শিবির। সেখানকার মৎস্যজীবীদের মধ্যে চার্চের প্রভাব রয়েছে। এর কয়েকমাস আগে সেখানে ধর্মগুরু এবং নাগরিক সমাজের বিশিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। বিজেপির কৌশল টের পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য পিনারাই বিজয়ন মৎস্যজীবীদের দাবি মেনে নিয়ে আন্দোলনে আপাতত জল ঢেলেছেন। বিজয়নও বৈঠক করেছেন চার্চের সঙ্গে।
মুসলিমদের কাছে টানতে হালে বাম সরকারের সঙ্গে ওই সম্প্রদায়ের বিরোধকে কাজে লাগাতে চাইছে গেরুয়া শিবির। উগ্র মুসলিম সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে সিপিএম পরিচালিত সরকার। অভিযান চালাচ্ছে এনআইএ-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক এজেন্সি।
কংগ্রেস প্রচার করছে, মুসলিমদের প্রতি মনোভাবে বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের কোনও ফারাক নেই। এই সুযোগে বিজেপি মুসলিম সংগঠনগুলির সঙ্গে সখ্য বাড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তাদের দাবিদাওয়াগুলি কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়ে পূরণের চেষ্টা হবে। খ্রিস্টানদেরও একই প্রতিশ্রুতি দেন নাড্ডাও।
কেরলে আরএসএস শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও ভোটের বাক্সে বিজেপির সুবিধা করতে না পারার কারণ সেখানে খ্রিস্টান এবং মুসলিম সংগঠনগুলিও সমান সক্রিয়। চার্চ এবং মসজিদ দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কেরলে খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রভাব আছে এমনকী অন্য ধর্মের মধ্যেও। উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির মতো কেরলেও সাক্ষরতা, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্যর বিকাশে চার্চের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর স্বাধীনতার আগে থেকে কেরলে সংখ্যালঘুরা কংগ্রেস এবং বাম শিবিরের মধ্যে বিভক্ত। স্বাধীনতা পরবর্তী বিগত ৭৬ বছরে তাদের রাজনৈতিক আত্মীয়তা ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে হিন্দুত্ববাদী শিবির।
এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে গত বছর জুলাইয়ে হায়দরাবাদে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলকে নতুন পথে চলার বার্তা দেন। তিনি বলেন, বিজেপিকে শুধু সংখ্যাগুরুর স্বার্থ দেখলে চলবে না। সংখ্যালঘুদের দলিত, পশ্চাৎপদ অংশের কাছেও পৌঁছতে হবে দলকে।
এরপরই উত্তরপ্রদেশে পসমন্দা অর্থাৎ আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মুসলিমদের কাছে টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মন পেতে পরীক্ষানিরীক্ষার ল্যাবরেটরি করা হয়েছে কেরলকে। বিজেপির ন্যূনতম টার্গেট ২০২৪-এ তিরুবনন্তপুরম লোকসভা আসনটির দখল নেওয়া।
ইসরোর সেই বিজ্ঞানী দেশদ্রোহী নন, অভিযোগটাই ছিল মিথ্যা, কোর্টে জানাল সিবিআই